Sunday, August 16, 2015

নারী কী পুরুষের মত শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে?

চিরায়ত বাঙালি সমাজে নারীকে যুগযুগ ধরে কোমল, মমতাময়ী, ছিঁচকাঁদুনে, অসহায় ও শারীরিকভাবে দুর্বল হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রকৃতিই নারীকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে তৈরি করেছে বলে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস।

কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? নারীর শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়াটা কি শুধুই প্রাকৃতিক ব্যাপার? নাকি এর পিছনে দীর্ঘদিনের তৈরি সামাজিক কাঠামো, রীতিনীতি ও সোসাল সাইকোলজিরও একটা প্রভাব রয়েছে?

প্রশ্ন হচ্ছে, নারীর শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়াটা যদি শুধুই প্রাকৃতিক হয়, তাহলে লায়লা আলী (বক্সার মোহাম্মাদ আলীর কন্যা) একাই কীভাবে সাধারন পাঁচজন পুরুষকে অনায়াসে কুপোকাত করে দিতে পারে?

সাধারন একজন নারীর পক্ষে নিশ্চয়ই পাঁচ জন পুরুষকে কুপোকাত করা সম্ভব না। কিন্তু লায়লা আলী সেটা পারে কেননা তাকে সেভাবে ট্রেইন করা হয়েছে। এ থেকে কি এটা বোঝা যায় না যে উপযুক্ত পরিবেশ ও ট্রেইনিং পেলে একজন নারীও একজন পুরুষের মত শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে?

এ প্রসংগে বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম চৌকশ পুলিশ অফিসার, মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরপত্তা রক্ষা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (SSF) সাবেক সদস্য, সিনিয়র এএসপি মাশরুফ হোসাইন ফেসবুকে তার (বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে ছুটিতে আছেন) কর্মস্থল জাপানের "মুয়ে থাই ওয়ার্কশপে"র একটা ঘটনা বর্ননা করেছেন। চলুন, তার মুখ থেকেই শোনা যাক বাকি কথাগুলো।

"পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি ইন্সট্রাক্টর দেখে রিং এ
ঢুকেছিলাম, ঠিক আড়াই মিনিটের মাথায় শরীরের আশি ভাগ জায়গায় সাপের ছোবলের মত লাত্থি আর ঘুষি খেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে আমার ইগো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। প্রবল আক্রোশে ঘুষি বসাতে যাই, দেখি আমার প্রতিপক্ষ ঠিক আধ সেকেন্ড আগে সরে গিয়েছে। সবচাইতে বিষাক্ত ছিল ডাবল একশন পাঞ্চ, একই সাথে ঘুষি আর কনুই দিয়ে পর পর মার।

বেইজ্জতির তখনও শেষ হয়নি। Why don't you fight with our lady instructor?! বলেই ডাকা হল জেনীকে।

Wanna fight me? বলে সুগঠিত দেহের অধিকারিনী জেনি মিষ্টি করে একটা হাসি দিল।

আগের সব বেইজ্জতি সেই ভূবনমোহিনী হাসিতে ভুলে গেলাম। হায়, আমি কি জানতাম, কি ভুলটা করতে যাচ্ছি!

"ওহ ইয়াহ" বলে ঢুকলাম রিং-এ। ইয়া মাবুদ, এক সেকেন্ডে জেনীর সেই লাস্যময়ী ভাব উধাও! মনে হচ্ছিল ময়ুরী থেকে চিতাবাঘের বিবর্তন দেখছি!

এর পরের ত্রিশ সেকেন্ড যা হল ওটাকে বলা যায়
এ্যাবসলিউট এনাইহিলেশন। শরীরের বাকি যে বিশ ভাগ বাকি ছিল, তার পুরোটাই ভরে গেল জেনির অপরূপ পদস্পর্শে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মধ্যপ্রদেশের। গার্ড পরা না থাকলে আমার ভবিষ্যত সঙ্গিনীকে ডাক ছেড়ে কাঁদতে হত। আমি খুবই নারীবাদী মানুষ, তবুও যেটুকু ইগো বাকি ছিল, জন্মের মত মিটে গেল।

মর্মে মর্মে একটা জিনিস বুঝলাম, উপযুক্ত ট্রেনিং
পেলে একজন পেশাদার পুলিশ অফিসারকে পিটিয়ে শুইয়ে দেয়াও সাইজে অর্ধেক কোন মেয়ের পক্ষে ভালোভাবেই সম্ভব। চিন্তা করছি, আমাদের মেয়েদের যদি ট্রেইন করা যায়, নিপীড়কদের কি অবস্থা তারা করবে!

বাংলাদেশের মেয়েদের বলছি, আর কত মার খাবেন আপনারা? জাগো গো ভগিনী!"

No comments:

Post a Comment