Wednesday, December 31, 2014

এলোমেলো ভাবনা (১)

(১) মানবজীবনে ব্যর্থতা বা সফলতা বলতে আসলে আলাদা কোন চাপ্টার বা অধ্যয় নাই; যা আছে তা হল অভিজ্ঞতা অর্জন। আর অভিজ্ঞতাই হচ্ছে মানবজীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।

(২) সফলতার কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান নাই; এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।

(৩) ব্যাক্তি জীবনে যথাযথ চেষ্টা করার পরও কোন কিছু না পেলে হতাশ হওয়া বা মন খারাপ করা উচিৎ না।

(৪) স্বপ্ন থেকেই বাস্তবতার জন্ম হয়। কাজেই, স্বপ্ন দেখতে থাকো। এমন অনেক কিছু হবে, যা কেউ ভাবেনি আগে।

(৫) সংখ্যালঘুর বেদনা বুঝতে যদি সংখ্যালঘু হওয়া লাগে, তবে মানুষ হিসেবে দাবী করা কেন?

(৬) অতীতকে বর্তমানে খুঁজতে হয় না। কারন তা বর্তমানকে কেবল আরো জটিল ও দুঃখময় করে তোলে।

(৭) সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে হবে। সেটা যত রুঢ় বা কষ্টকর হোক না কেন। কারন যেটা ঘটে গেছে, তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবেনা। আর যেটা অনিবার্য, সেটাকে বাধা দেয়ার চেস্টা হাস্যকর।

(৮) মেধা নয়; পরিশ্রমই সফল হওয়ার জন্য বেশি জরুরি।

(৯) না জেনে ভুল করার চেয়ে জেনে ভুল করা ভাল। কারন তাতে প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অন্তত আগাম ধারনা থাকে।

(১০) শুধু নারী বা পুরুষ নয়; হিন্দু বা মুসলমান নয়; কিংবা বাঙালি বা চাকমাও নয়; মানুষ হতে হবে।

Friday, December 26, 2014

নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করে রাখার জন্যই কি 'বিয়ে' নামক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছিল?

আদিম সাম্যবাদী সমাজে নারী পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্য ছিলনা। সে সমাজে না ছিল 'বিয়ে' নামক কোন প্রতিষ্ঠান, না ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারনা। সমাজের নেতৃত্ব ছিল নারীদের হাতে। নারীদের কেন্দ্র করেই তৎকালীন সমাজ পরিচালিত হত।

সন্তান ধারন করে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখায় প্রধান ভূমিকা পালনের জন্য মূলত নারীকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হত।

সে সময়ে 'বিয়ে' নামক কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় এবং নারী-পুরুষ 'বহুগামী' হওয়ায় পিতৃত্ব নির্ধারন জটিল ছিল। ফলে সন্তান নারীর পরিচয়েই বেড়ে উঠত। এর ফলে নারী কে কেন্দ্র করে সমাজ পরিচালিত হত ও নারীরা সমাজে বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত।

সময়ের পরিক্রমায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারনা উদ্ভব হয়। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের জন্য পুরুষের জন্য সন্তানের পরিচয় জানা আবশ্যক হয়ে ওঠে।

এর ফলে বিয়ে নামক সামাজিক চুক্তির উদ্ভব হয়। আর এর মাধ্যমে নারী তার ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত স্বাধীনতা হারায়। বিয়ে নামক চুক্তির মাধ্যমে নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করে রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এছাড়া মাতৃত্বজনিত কারনে অর্থনৈতিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ার ফলে নারী পুরুষের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পরে।

ইতিহাসের আলোকে নারী জাতির পিছিয়ে পড়ার কারন খুঁজতে গেলে দেখা যায় যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া,পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, নারীবিদ্বেষী ও পুরুষবান্ধব ধর্ম, সংস্কৃতি, ও আইন কানুন নারীকে শৃঙ্খলিত করে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আত্ববিশ্বাস কিভাবে তৈরি হয়?

আত্ববিশ্বাস দুই ভাবে তৈরি হয় । বেশি জানা থেকে আর কম জানা থেকে। অর্থাৎ জ্ঞান যেমন আত্ববিশ্বাস তৈরি করতে পারে, তেমনি অজ্ঞতা থেকেও আত্ববিশ্বাস তৈরি হতে পারে।

কাজেই, আত্ববিশ্বাস থাকলেই সবসময় আত্বতুষ্টিতে ভোগার কিছু নাই। বরং আত্ববিশ্বাস কে যাচাই করে নিতে হবে সেটা কোথা থেকে তৈরি হয়েছে।

গ্লোবালাইজেশান বিশ্বকে কী দিয়েছে?

গ্লোবালাইজেশান বা বিশ্বায়ন ঝলমলে, উজ্জল ও আকর্ষনীয় এক বিশ্ব উপহার দিয়েছে। তবে সেটা সবার জন্য নয়; শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটা শ্রেনীর মানুষের জন্য; নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য। আর তারা যে পুঁজিপতি বা ধনী শ্রেনী; তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বিশ্বায়ন ধনী ও উন্নত বিশ্বকে করেছে আরো ধনী ও উন্নত। বিপরীতে বেশিরভাগ দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ হারিয়েছে স্থানীয় শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য, হয়েছে আরো বেশি প্রান্তিক, আরো বেশি নির্ভরশীল।

বস্তুত, গ্লোবালাইজেশান একটা উন্নয়নের প্রতিযোগিতা; যেখানে যার বেশি পুঁজি আছে, টেকনোলজি আছে, ক্ষমতা আছে, সে অবধারিতভাবে বিজয়ী হবে। আর যার বা যেসব দেশের এগুলো নাই, তারা হবে আরো বেশি প্রান্তিক, আরো দরিদ্র।

Sunday, December 7, 2014

শুধু ধর্ম নয়; ব্যবসাকেও রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে।

ধর্মের নামে রাজনীতি যেমন ক্ষতিকর; তেমনি রাজনীতির নামে ব্যবসা বা ব্যবসার নামে রাজনীতিও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

ধর্মকে ধর্মের যায়গায় থাকতে দিতে হবে, কারো প্রতি ধর্মকে চাপিয়ে দেয়া যেমন অপরাধ, তেমনি কাউকে ধর্ম পালনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও সমান অপরাধ।

রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় রাখতে হবে। রাজনীতি যেন হয় গনমানুষের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার, শোষন মুক্ত সাম্যবাদী সমাজ প্রথিষ্ঠার হাতিয়ার। রাজনীতি যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারন মানুষদের বঞ্চিত করে গুটিকয়েক মানুষের উপরে ওঠার সিড়ি না হয়।

ব্যবসাকেও ব্যবসার জায়গায় রাখতে হবে। রাজনীতিকে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সুবিধা নেয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করাও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।  মনে রাখতে হবে, ব্যবসা হতে হবে জনকল্যাণের জন্য; গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত অসম কল্যানের জন্য নয়।

Thursday, December 4, 2014

সেক্যুলারিজম কি?

ইউরোপীয় রেনেসাঁর আগে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা মনে করত, মৃত্যুর পর যে অনন্ত জগৎ অপেক্ষা করছে সেটাই আসল জীবন। দুনিয়ার জীবন তার এপেনডেজ বা আনুষংগিক বস্তু মাত্র।

খ্রীস্টানদের শিল্প সাহিত্য সবখানেই পরকালের মহিমাকীর্তন করা হত। যীশুখ্রীস্টতো এই নশ্বর পৃথিবীকে ভেল অব টিয়ার্স বলে গেছেন।

এই দৃষ্টিভংগি একদিনে,  একমাসে, একবছরে পাল্টায় নাই; অনেকদিন লেগেছে। রেনেসাঁর ফলে এই দৃষ্টিভংগিটা পাল্টে গেল। রেনেসাঁর আগে পরকালই ছিল সব। রেনেসাঁর পরে এই দুনিয়াটা ই সব, পরকাল কিছুই না। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই পরিবর্তিত দৃষ্টিভংগি অর্থাৎ পরকাল কে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ইহকাল কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনাই হচ্ছে সেক্যুলারিজম।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইসলাম ধর্মের সাথে সেক্যুলারিজনের কিছুটা হলেও সাদৃশ্য আছে, অন্তত অন্যান্য ধর্মের তুলনায়। ইসলাম এমন একটা ধর্ম, যেখানে পরকালের সাথে সাথে ইহকালের ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ইসলাম ধর্মের সাথে অন্যান্য ধর্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, এখানে পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে,  সাথে ইহকালের গুরত্বও অস্বীকার করা হয় নাই। ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ অর্থাৎ ইহকাল ও পরকালের গুরুত্বের কথা ইসলামে যেভাবে বলা হয়েছে,  অন্যান্য ধর্মে সেভাবে বলা হয় নাই।

আদি ধর্ম সমূহে ইহকালকে নয় শুধুমাত্র পরকালকেই আসল জীবন হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হত। তুলনামূলকভাবে ইসলাম সাম্রতিক ধর্ম হওয়ায় এতে পরকালের সাথে ইহকালেরও গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে। বিবর্তনের ধারায় যদি নতুন কোন ধর্মের আবির্ভাব হয়, তাহলে কি সেই ধর্মে পরকালের গুরুত্ব হ্রাস ও  ইহকালের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে? নাকি প্রচলিত ধর্ম সমূহ টিকে থাকার জন্য হলেও ধর্মের সেক্যুলারাইজেশান হবে।

Tuesday, December 2, 2014

পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা কী?

পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) কর্তৃক আয়োজিত পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৭ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য হোটেল সুন্দরবনে আসলাম।

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সশস্র সংগ্রামের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা কী?

সভার শুরুতে পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বললেন, সরকার শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো সহ দুই তৃতীয়াংশই বাস্তবায়ন করেনি; এমনকি এ ব্যপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবাইয়াৎ ফেরদাউস বললেন, যে বাঙালি জাতি নিজের ভাষার জন্য,  জাতি পরিচয়ের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে সশস্র সংগ্রাম করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন, সেই বাঙালি জাতিই অন্য (পাহাড়ী) জাতিগোষ্ঠীকে তাদের জাতি পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে কীভাবে বাঙালি হয়ে যেতে বলে?

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা রহমান বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা এখন আর শুধু পার্বত্য চট্রগ্রামের সমস্যা নয়; এটা পুরো জাতির সমস্যা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ বাঙালিই পার্বত্য চট্রগ্রামের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞত। তাই পার্বত্য চট্রগ্রামের আদিবাসিদের সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে মানবিক বোধসম্পন্ন, সচেতন বাঙালিদের এগিয়ে আসতে হবে।

Monday, December 1, 2014

ধূমপানের কি কোন উপকারিতা নেই?

আমরা সবাই জানি যে সিগারেট বা ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপানের  সাথে ক্যানসার সহ আধুনিক কালের অনেক রোগের (accute types of disease)  দহরম- মহরম সম্পর্ক রয়েছে।

তাহলে, ধূমপানের কি কোন উপকারিতা নেই?

ব্যক্তি জীবনে ধূমপানের প্রভাব ক্ষতিকর প্রমানিত হলেও সমাজ জীবনে কিন্তু এর কিছু উপকারি দিকও রয়েছে। সিগারেট বা ধূমপান মানুষের মধ্যে সামাজিক ইন্টেগ্রেশন ও মিথস্ক্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

আজকের এই ইন্টারনেট ও ফেসবুক যুগে মানুষের মধ্যে রিয়েল লাইফ ইন্টারেকশন আশংকাজনক হারে কমছে। বাসে, ট্রেনে ভ্রমনের সময় মানুষ তার পাশের সিটে বসে থাকা অপরিচিত কারো সাথে পরিচিত হওয়া বা দু-চার কথা বলার চেয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

অপরদিকে, ধূমপায়ীরা সাধারনত একটু সুযোগ পেলেই ধূমপানের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে নিয়ে পরিচিত বা অপরিচিত ধূমপায়ীদের সাথে তুমুল আড্ডা জমিয়ে ফেলে। ধূমপানের অজুহাতে গড়ে ওঠে এক ধরনের বিশেষ সম্পর্কের জাল বা নেটওয়ার্ক।
যেমন, আমি অধূমপায়ী হওয়ায় লঞ্চের দোতালায় এক কোনে একাকী বসে ফেসবুকিং করছি; অন্যদিকে লঞ্চের দোতালায় পিছন দিকে বিশাল এক গ্রুপ ধূমপান করছে আর হইচই করে মজা করছে। মনে হচ্ছে যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা মিলে কোথাও পিকনিকে যাচ্ছে অথচ এদের মধ্যে ধূমপানের সম্পর্ক ছাড়া আর কোন পরিচয় বা সম্পর্ক নেই।

ধর্ম যেমন মানুষের মধ্যে ইন্টেগ্রেশন, সলিডারিটি বাড়িয়ে সমাজকে টিকে থাকতে সাহায্য করে তেমনি ধূমপানও কিছুটা হলেও সামাজিক সম্পর্ক বা কোহেশন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। 

NB: Smoking is injurious to health & environment.

#সমাজচিন্তা

Wednesday, November 26, 2014

অতীত সোনালী হলে বর্তমান কী?

If old is gold,  what will be the present?  আমাদের অনেকের কাছেই অতীত হচ্ছে এক সোনালী অধ্যয়।  আমরা সবসময় অতীতের সুখস্মৃতি রোমান্থন করতে পছন্দ করি। বর্তমান নিয়ে শত অভিযোগ অথচ অতীত নিয়ে কত উচ্ছলতা!  আহা! যদি আবার সেই অতীতে ফিরে যেতে পারতাম!

অতীত নিয়ে এই মোহগ্রস্ততা কেন? অতীতের জীবন অনেক সুন্দর ছিল তাই না বর্তমানের প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা? নাকি পূজিবাদি সমাজের যান্ত্রিক সভ্যতার চাপে নিজেকে হারিয়ে ফেলা?

অতীত আসলে কী? অতীতের কি কোন তাৎপর্য আছে? আমার কাছে অতীত কিছু অভিজ্ঞতার সমষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়।

Tuesday, November 25, 2014

মানুষ কি নিঃস্বার্থ নাকি স্বার্থপর?

মানুষ আসলে কী?  সে কি শুধুই স্বার্থপর জীব?  নাকি নিঃস্বার্থ মানবিক এক জীব? এককথায় এর উত্তর দেয়া প্রায় অসম্ভব। মানুষ আসলে কখনো নিঃস্বার্থ আবার কখনো স্বার্থপর আবার কখনো একসাথে দুটোই।

মানুষ নিঃস্বার্থ বলেই মা তার সন্তানকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে ধারন করে, রাতের ঘুম ত্যাগ করে লালনপালন করে। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে।

আবার মানুষ  স্বার্থপর বলেই বিপদের সময় প্রিয় মানুষের হাতে রাখা হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। হতে পারে তা কোন বৃহত্তর কোনো স্বার্থ রক্ষার নামে। এমনকি নিজের ব্যাক্তিগত/সামষ্টিক লাভ/সুখের জন্য অন্যের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতেও পিছপা হয়না।

মানুষ স্বার্থপর বলেই পুঁজিপতি পুঁজিবাদী সমাজে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য সে শুধু সর্বাধিক লাভ করতে চায়। আর তাতে সমাজের কার কি ক্ষতি তা নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ নাই।

আবার মানুষ নিঃস্বার্থ বলেই ডঃ ইউনুস পুঁজিবাদি সমাজে সামাজিক ব্যাবসা চালু করার সপ্ন দেখে। গরীবের বন্ধু কার্ল মার্ক্স সমাজতন্ত্র/সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিপ্লবী কলম ধরে। চে গুয়েভারার মত বিপ্লবীরা নিজের জীবন বিলিয়ে দেয় মানবতার মুক্তির জন্য।

মানবসমাজে এই যে দ্বন্দ্ব তা আসলে চিরন্তন।  প্রকৃতপক্ষে, সব কিছুর মধ্যেই এই দ্বান্দ্বিক প্রবণতা বিদ্যমান।  হেগেল সাহেবের মতে সমাজের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব সদা বিরাজমান থাকলেও তা সমগ্রতার ভিতর একপ্রকার ঐক্য সৃষ্টি করে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমন পুঁজিবাদি সমাজে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব থাকলেও তাদের মধ্যে একধরনের  অদৃশ্য ঐক্য রয়েছে; যার ফলে পুঁজিবাদি সমাজ ব্যাবস্থা টিকে আছে।

অন্যদিকে বিপ্লবী মার্ক্সের মতে সমাজের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব দ্বয়ের পাশাপাশি শান্তিপুর্ন সহবস্থান সম্ভব নয়। মার্ক্সের মতে এই দ্বন্দ্বই সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমন সামন্ত সমাজে সামন্ত প্রভু ও ভূমিদাসদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলেই পুঁজিবাদি সমাজ ব্যাবস্থার উদ্ভব হয়। একই ভাবেই পুঁজিবাদি সমাজে শিল্পপতি ও শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্বের ফলেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।