Thursday, February 25, 2016

রাজনীতিতে 'ডানপন্থী/বামপন্থী' এর ধারনা কোথা থেকে এলো?

রাজনৈতিক আলোচনায় 'ডানপন্থী' বা 'বামপন্থী' শব্দ দুটি খুবই আলোচিত বিষয়। আর এই প্রত্যয় দুটি কোথা থেকে ও কিভাবে আসলো তার এক মজার ইতিহাস রয়েছে।

ডানপন্থী' বা 'বামপন্থী' প্রত্যয় দুটির উৎপত্তি ফরাসি বিপ্লবের সময় (১৭৮৯-১৭৯৯)। তৎকালীন সময়ে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে ফরাসী রাজার সিংহাসন/চেয়ারের বামপাশে যারা বসতো তাদেরকে বামপন্থী আর যারা ডানপাশে বসতো তাদেরকে ডানপন্থী বলে অভিহিত করা হত।

বামপন্থীরা মূলত ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরোধী এবং ফরাসি রিপাবলিক ও আসন্ন বিপ্লবের পক্ষে ছিল। অন্যদিকে ডানপন্থীরা বিদ্যমান ফরাসি রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিল।

বর্তমানে, ডানপন্থী বলতে বোঝায় যারা রক্ষনশীল, বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থার পক্ষে ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির পক্ষে কথা বলে। এছাড়া ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকেও ডানপন্থী হিসেবে অভিহিত করা হয়।

অন্যদিকে, বামপন্থী বলতে বোঝায়  যারা প্রগতিশীল, বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তন বা আমূল সংস্কারের পক্ষে ও সামাজিক সমতার কথা বলে।

Sunday, February 21, 2016

একুশের চেতনা কোথায়?

বাঙালি ইতিহাস সচেতন জাতি না। ইতিহাস সচেতন হলে অন্তত তারা আদিবাসীদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে কার্পন্য করতো না।

যারা মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য জীবন উৎসর্গ করল, অথচ তারাই আবার স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশী অবাঙালি আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করতে পারলোনা।

লজ্জা! এ আমাদের জাতীয় লজ্জা!

এলোমেলো ভাবনা (১৪)

(১) ম্যাচুরিটি বয়সের সাথে নয়; অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। যার অভিজ্ঞতা যত বেশি, সে ততোবেশি ম্যাচিউরড।

(২) চিন্তা-ভাবনা আর যুক্তির আলোকে যেটা বলা হয় তাকে দর্শন বলা যেতে পারে; সমাজবিজ্ঞান না। সমাজবিজ্ঞান হতে হলে তার পিছনে অবশ্যই ডেটা বা তথ্য-প্রমান থাকতে হবে।

(৩) ভিন্নমতের সাথে ভিন্নমত দিয়েই লড়তে হয়, চাপাতি বা পিস্তল দিয়ে নয়।

(৪) আগেকার বাঙালি সমাজে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কাছে ছিলেন একচ্ছত্রভাবে গুরু এবং শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু উপমহাদেশে ইংরেজরা শাসনক্ষমতায় আসার পর থেকে ধীরে ধীরে তারা বন্ধু ও প্রেমিকে পরিনত হতে শুরু করেন।

(৫) যে যা না, তা হওয়ার ভান করাটা হাস্যকর।

(৬) পাক-ভারত উপমহাদেশে সতীদাহ প্রথা থাকলেও পতিদাহ প্রথা কেন ছিল না?

(৭) মার্ক্সবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সবখানে অর্থনীতি দেখে এবং অর্থনীতি পরিবর্তন হলে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করে।

কিন্তু মানুষের জীবনে অর্থনীতি বড় ভূমিকা রাখলেও এটাই একমাত্র শেষকথা না। ব্যক্তি মানুষের জীবনে আবেগ-অনুভূতি, সংস্কৃতি-ইডিওলজি মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

(৮) পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা নারীদের টাকা, গায়ের জোর এবং ধর্মের নামে বন্দী করে রাখে। কাজেই এই তিন ক্ষেত্রে নারীরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে না পারলে তাদের মুক্তি নাই।

(৯) সমাজবিজ্ঞান আর সমাজচিন্তা আমার কাছে এক নয়।

সমাজবিজ্ঞান হতে হলে অবশ্যই তার পিছনে ডেটা বা তথ্য-প্রমান থাকতে হবে। আর সমাজচিন্তা হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। এটাকে সমাজবিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্পের হাইপোথিসিস বা অনুমান বলা যেতে পারে।

(১০) ঘরবউ থাকা যদি দোষের না হয়; তাহলে ঘরজামাই থাকা কেন দোষের হবে?

Monday, February 8, 2016

বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের কোন সম্পর্ক আছে কি?

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গত এক বছরে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। আর এর ৯০ শতাংশই হয়েছে নারীদের উদ্যোগে অর্থাৎ নারীরাই তাঁদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)

এছাড়া, গত ২০১৪ সালে শুধু ঢাকায় ৬০ হাজার ডিভোর্স বা নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে (সূত্র: সমকাল)। পুরো দেশকে হিসেবে আনলে এই সংখা যে বিশাল আকার ধারন করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই।

বাংলাদেশে এখন নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

একসময়ে এদেশের অনেকে পশ্চিমা বিশ্বের পারিবারিক বন্ধন হালকা বা ডিভোর্সি পরিবারের সংখ্যা বেশি বলে পশ্চিমাদের চেয়ে আমাদের সমাজ অনেক ভাল আছে বলে গর্ব করতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজও এখন সেদিকে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে পারিবারিক বন্ধন এখনো খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে কেন? আর বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়া আসলে কী নির্দেশ করে?

ডিভোর্স লেটারে নারীরা তাঁদের স্বামীদের তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদকাসক্তি ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের পিছনে কি শুধুই এসব কারন জড়িত নাকি এর পিছনে আরো কারন রয়েছে?

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে ৮৭ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এখানে নির্যাতন বলতে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, নারী নির্যাতন কি শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়ে হচ্ছে? অতীতে কি নারী নির্যাতন হতো না? কেউ কেউ বলেন, অতীতে নারী নির্যাতন হলেও তার পরিমান সাম্প্রতিক সময়ের মত এত বেশি ছিল না। নারীবাদীরা অবশ্য বলেন, নারী নির্যাতন এখনকার মত আগেও ছিল। পার্থক্য হচ্ছে আগে এসব নির্যাতনের কথা রিপোর্টিং হতো না কিন্তু এখন বিভিন্ন এনজিও এবং গনমাধ্যমের কল্যানে সেটা প্রকাশিত হচ্ছে।

এবার আমার আসল কথায় আসি, মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের একটা ইন্টারেস্টিং সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দরিদ্র এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন যত বাড়ছে, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা তত বাড়ছে।

এর কারন হিসেবে বলা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তার, অর্থনৈতিক কাজে নারীর অংশগ্রহণের ফলে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ফলে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে নারী এখন স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। আগের মত স্বামীর/শশুর বাড়ির নির্যাতন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেনা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় নারী নিজের জীবন নিজের মত করে নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে পারছে।