Sunday, August 16, 2015

নারী কী পুরুষের মত শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে?

চিরায়ত বাঙালি সমাজে নারীকে যুগযুগ ধরে কোমল, মমতাময়ী, ছিঁচকাঁদুনে, অসহায় ও শারীরিকভাবে দুর্বল হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রকৃতিই নারীকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে তৈরি করেছে বলে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস।

কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? নারীর শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়াটা কি শুধুই প্রাকৃতিক ব্যাপার? নাকি এর পিছনে দীর্ঘদিনের তৈরি সামাজিক কাঠামো, রীতিনীতি ও সোসাল সাইকোলজিরও একটা প্রভাব রয়েছে?

প্রশ্ন হচ্ছে, নারীর শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়াটা যদি শুধুই প্রাকৃতিক হয়, তাহলে লায়লা আলী (বক্সার মোহাম্মাদ আলীর কন্যা) একাই কীভাবে সাধারন পাঁচজন পুরুষকে অনায়াসে কুপোকাত করে দিতে পারে?

সাধারন একজন নারীর পক্ষে নিশ্চয়ই পাঁচ জন পুরুষকে কুপোকাত করা সম্ভব না। কিন্তু লায়লা আলী সেটা পারে কেননা তাকে সেভাবে ট্রেইন করা হয়েছে। এ থেকে কি এটা বোঝা যায় না যে উপযুক্ত পরিবেশ ও ট্রেইনিং পেলে একজন নারীও একজন পুরুষের মত শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে?

এ প্রসংগে বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম চৌকশ পুলিশ অফিসার, মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরপত্তা রক্ষা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (SSF) সাবেক সদস্য, সিনিয়র এএসপি মাশরুফ হোসাইন ফেসবুকে তার (বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে ছুটিতে আছেন) কর্মস্থল জাপানের "মুয়ে থাই ওয়ার্কশপে"র একটা ঘটনা বর্ননা করেছেন। চলুন, তার মুখ থেকেই শোনা যাক বাকি কথাগুলো।

"পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি ইন্সট্রাক্টর দেখে রিং এ
ঢুকেছিলাম, ঠিক আড়াই মিনিটের মাথায় শরীরের আশি ভাগ জায়গায় সাপের ছোবলের মত লাত্থি আর ঘুষি খেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে আমার ইগো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। প্রবল আক্রোশে ঘুষি বসাতে যাই, দেখি আমার প্রতিপক্ষ ঠিক আধ সেকেন্ড আগে সরে গিয়েছে। সবচাইতে বিষাক্ত ছিল ডাবল একশন পাঞ্চ, একই সাথে ঘুষি আর কনুই দিয়ে পর পর মার।

বেইজ্জতির তখনও শেষ হয়নি। Why don't you fight with our lady instructor?! বলেই ডাকা হল জেনীকে।

Wanna fight me? বলে সুগঠিত দেহের অধিকারিনী জেনি মিষ্টি করে একটা হাসি দিল।

আগের সব বেইজ্জতি সেই ভূবনমোহিনী হাসিতে ভুলে গেলাম। হায়, আমি কি জানতাম, কি ভুলটা করতে যাচ্ছি!

"ওহ ইয়াহ" বলে ঢুকলাম রিং-এ। ইয়া মাবুদ, এক সেকেন্ডে জেনীর সেই লাস্যময়ী ভাব উধাও! মনে হচ্ছিল ময়ুরী থেকে চিতাবাঘের বিবর্তন দেখছি!

এর পরের ত্রিশ সেকেন্ড যা হল ওটাকে বলা যায়
এ্যাবসলিউট এনাইহিলেশন। শরীরের বাকি যে বিশ ভাগ বাকি ছিল, তার পুরোটাই ভরে গেল জেনির অপরূপ পদস্পর্শে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মধ্যপ্রদেশের। গার্ড পরা না থাকলে আমার ভবিষ্যত সঙ্গিনীকে ডাক ছেড়ে কাঁদতে হত। আমি খুবই নারীবাদী মানুষ, তবুও যেটুকু ইগো বাকি ছিল, জন্মের মত মিটে গেল।

মর্মে মর্মে একটা জিনিস বুঝলাম, উপযুক্ত ট্রেনিং
পেলে একজন পেশাদার পুলিশ অফিসারকে পিটিয়ে শুইয়ে দেয়াও সাইজে অর্ধেক কোন মেয়ের পক্ষে ভালোভাবেই সম্ভব। চিন্তা করছি, আমাদের মেয়েদের যদি ট্রেইন করা যায়, নিপীড়কদের কি অবস্থা তারা করবে!

বাংলাদেশের মেয়েদের বলছি, আর কত মার খাবেন আপনারা? জাগো গো ভগিনী!"

Tuesday, August 11, 2015

সমাজবিজ্ঞানের চার প্রভাবশালী স্কুল যা বলতে চায়!!

সমাজবিজ্ঞান চিন্তার জগতে কয়েকটি স্কুল বা পার্সপেকটিভ আছে। তার মধ্যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্কুলের দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:

(১) ফাংশনাল স্কুল

এই গ্রুপ অব থট অনুযায়ী, যতক্ষন পর্যন্ত কোন কিছুর ফাংশন বা কার্যকারিতা থাকবে, ততক্ষন পর্যন্ত সমাজে তা টিকে থাকবে। কার্যকারিতা থাকবেনা তো তা হারিয়ে যাবে।

যেমন,  ফকির-দরবেশের ঝাড়ফুঁকে যদি অসুস্থতা দূর হয়, তাহলে মানুষ ডাক্তারের কাছে না যেয়ে ফকিরের কাছেই যাবে। আবার ফকিরের চিকিৎসা ব্যার্থ বা ভুয়া প্রমানিত হলে মানুষ ফকিরের কাছে না যেয়ে ডাক্তারের কাছেই যাবে।

(২) ক্রিটিকাল স্কুল

এই পার্সপেক্টিভ অনুযায়ী সমাজ এগিয়ে যাওয়ার পথ কোনভাবেই মসৃন নয় বা দুই বন্ধুর মত হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপার নয়। এটা হচ্ছে ইদুর-বিড়াল খেলার মতো। দ্বন্দ্ব-সংঘাত-মারামারির মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যায়।

(৩) সিম্বলিক ইন্টারেকশান স্কুল

এদের মূলকথা হল, সবাই যা করে, আমিও তাই করব। একজনের দেখাদেখি অন্যরা তা অনুসরন করে।

যেমন, সাধারনত সমাজে কেউ মারা গেলে অন্যদের দু:খ প্রকাশ করতে হয়। তাই মৃত ব্যাক্তির জন্য ব্যাক্তিগতভাবে কেউ দু:খ না পেলেও সবাইকে দু:খের ভান করতে দেখা যায়।

(৪) ইভালিউশান স্কুল

এই গ্রুপের চিন্তাভাবানা ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত। বিবর্তনের এই তত্ব অনুসারে, কিছু করা হোক বা না হোক, ধীরে ধীরে সমাজ পরিবর্তন হবেই। অর্থাৎ সমাজ কখনো এক যায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং পরিবর্তনটা খুব দ্রুতও হবে না। ধীরে ধীরে সমাজে পরিবর্তন আসবে।

যেমন, নাস্তেক ব্লগাররা যতই লেখালেখি/গালাগালি করুক না কেন, সমাজের সব ধার্মিক তাদের যুক্তিতে (বা কুযুক্তি) মোহগ্রস্থ হয়ে রাতারাতি নাস্তেক হয়ে যাবে না।

Monday, August 10, 2015

এলোমেলো ভাবনা (১১)

(১) বালিকা, ভূমিকম্পন বোঝ, হৃদয় কম্পন বোঝ না?

(২) চেনা মানুষটার ভিতরেও আরেকটা অচেনা মানুষ থাকে যাকে চাইলেও সবসময় চেনা যায় না।

(৩) নারী অধীকারের প্রতি যাদের সম্মান নাই, তাদের প্রতিও আমার কোন সম্মান নাই।

(৪) কাউকে জাজ করার আগে একটু চিন্তা করা উচিত। কেননা সব সাধুরই একটা অতীত আছে, আবার সব পাপীরই একটা ভবিষ্যৎ আছে।

(৫) কোন নির্দিষ্ট ধর্ম-বর্ণ-জাতীর বিরুদ্ধে সচেতনভাবে যুক্তিহীন বিদ্বেষ ছড়িয়ে তাদের ক্ষেপিয়ে তোলাকে 'অসুস্থচিন্তা'র চর্চা বলা যেতে পারে, 'মুক্তচিন্তা'র চর্চা না।

(৬) যে সমাজ ভিন্নতা বা বৈচিত্রতা নিতে জানে না, সে সমাজে হিটলার, মুসোলিনি জন্ম নিতে পারে, সক্রেটিস, হেগেল, ইবনে খালদুন নয়।

(৭) প্রাকৃতিক বিজ্ঞান দিয়ে সমাজ বোঝা যাবে না; সমাজ বুঝতে হলে সমাজবিজ্ঞান লাগবে।

(৮) সাধারন মানুষেরা যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আনন্দ দেখে পুলকিত হয়, সমাজচিন্তাবিদরা সেখানে সংখ্যালঘুদের বেদনা দেখে চিন্তিত হয়।

(৯) জীবন মানে সবসময় নিজেকে খুঁজে বেড়ানো নয়; জীবন মানে নিজেকে তৈরি করে নেয়া।

(১০) সময়ই বলে দিবে কে ঠিক আর কে বেঠিক।

Friday, August 7, 2015

এলোমেলো ভাবনা (১০)

(১) যত বড় ব্যাখ্যা, ততো বড় মিথ্যা।

(২) ঘুঁনেধরা সমাজের পরিবর্তন চাইলে মন যোগাতে নয়, মন জাগাতে লিখতে হবে।

(৩) সাধারন মানুষেরা যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আনন্দ দেখে পুলকিত হয়, সমাজচিন্তাবিদরা সেখানে সংখ্যালঘুদের বেদনা দেখে চিন্তিত হয়।

(৪) ভালবাসায় মিথ্যে বলতে নাই। কেননা ভালবাসা মিথ্যাও বলে না আর কাউকে কষ্টও দেয় না। যদিও মানুষ এর দুটোই করে।

(৫) বর্তমানের আনন্দময় মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন, কেননা এটা সারাজীবন থাকবে না।

(৬) গতকালের কথা বাদ দিন। আজকের কথা ভাবুন।

(৭) সবাই যদি আপনাকে পছন্দ করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো একটা ভাঁড় অথবা আপনার নিজস্বতা বলতে আসলে কিছু নাই।

(৮) নিজের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করার অধিকার ভালবাসার মানুষকে দিয়ে দেয়ার নাম ভালবাসা না, সেটাকে দাসত্ব বলে।

(৯) আমি তোমার ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি। তবে তোমার সৌন্দর্য হচ্ছে অতিরিক্ত একটা বোনাস। :P

(১০) ধর্মান্ধ মৌলবাদী আর সেক্যুলার মৌলবাদী একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। দুটোই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য উপদ্রব। কেননা দুটো গ্রুপই তাদের বিপরীত চিন্তার প্রতি প্রচন্ড অসহিঞ্চু ও স্বৈরাচারী।

Saturday, August 1, 2015

এলোমেলো ভাবনা (৯)

(১) বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বা সমালোচনা হচ্ছে এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়া আর কোন পদ্ধতিকে পাত্তা দেয় না।

(২) ব্যাক্তির কোন আচরন যতক্ষন পর্যন্ত অন্য কোন ব্যাক্তির ক্ষতির কারন না হয়, ততক্ষন পর্যন্ত ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কোন প্রয়োজনীয়তা নাই।

(৩) ভিন্নতা বা বৈচিত্রতাই সুন্দর। অসুন্দর বলতে যদি কিছু থাকে, তবে সেটা হচ্ছে হোমোজিনিটি বা অভিন্নতা।

(৪) নারীবাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হল পুরুষতন্ত্রকে হটিয়ে একটা মানবিকতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যেখানে অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সহ সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।

(৫) সামনে এগিয়ে যাবার গোপন রহস্য হচ্ছে শুরু করা।

(৬) স্যাক্রিফাইস বা আত্বত্যাগ সবার জন্য নয়। স্যাক্রিফাইস তার জন্যই করা উচিত যে আপনার জন্য স্যাক্রিফাইস করে।

(৭) কাউকে গুরুত্ব কম দিলে তাকে হারাবেন আবার বেশি গুরুত্ব দিলে নিজে কষ্ট পাবেন।

(৮) মানুষ মিথ্যা বলতে পারে কিন্তু তার কাজ কখনো নয়।

(৯) অর্ধ সত্য সবসময়ই একটা বড় মিথ্যা।

(১০) অতীতকে পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা করে বর্তমান কে ধবংস করা সম্ভব।

এলোমেলো ভাবনা (৮)

(১) বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকতে পারে না।

(২) অতীতের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে হা-হুতাশ করতে নাই। কেননা প্রতিটা ভুলই মানুষকে আরো বেশি পরিনত করে।

(৩) সমাজে কালো মানুষের অধীকার যেমন সাদা মানুষেরা নির্দিষ্ট করে দিতে পারে না তেমনি নারীর অধীকার কী হবে সেটাও পুরুষেরা ঠিক করে দিতে পারে না।

(৪) সমাজের রীতিনীতি, আইন-কানুন সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠীরাই তৈরি করে। তাই সব সামাজিক রীতিনীতি সবসময় সমাজের সব সদস্যদের জন্য অসম ও ন্যায় হবে তা মনে করার কারন নাই।

(৫) একজন পুরুষ যেমন তার ইচ্ছে স্বাধীন যা যা করতে পারে, একজন নারীও তার ইচ্ছে স্বাধীন তা তা করার অধিকার রাখে।

(৬) সমাজে সাদা-কালো-বাদামী, নারী-পুরুষ সবাই মানুষ। আর মানুষ হিসেবে সবার জন্য সমাধিকার প্রযোজ্য।

(৭) সব মৌলবাদীদেরই কমন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের চেতনার দন্ড অত্যন্ত সংবেদনশীল। পান থেকে চুন খসলেই এদের অনুভূতির দন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

(৮) ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়ার কিছু নাই। কেননা ওটা এখনো আসে নি।

(৯) আমি তোমার সম্পূর্ণটাই চাই, শুধুমাত্র কোন অংশবিশেষ না।

(১০) একা থাকা মানেই যেমন একাকী না, তেমনি রিলেশনশিপে থাকা মানেও সবসময় সুখী না।

মৌলবাদের অ আ ক খ : মৌলবাদ ভাল নাকি খারাপ?

মৌলবাদ কথাটিকে ভাংলে আমরা পাই 'মৌল + বাদ'। মৌল শব্দটি মৌলিক এর বিশেষ্য পদ। আর 'বাদ' কথাটি আমরা "কথা বলা" প্রসঙ্গে ব্যবহার করি, যেমন প্র + বাদ, অপ + বাদ ইত্যাদি। সেই হিসাবে মৌলের সম্বন্ধে বলাকে মৌলবাদ বলা যায়।

সংক্ষেপে, মৌলবাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন মতবাদ বা  বিশ্বাসের অবিকৃত মূলতত্ত্ব।

যেকোন মতবাদ বা বিশ্বাসের মূলনীতিগুলোর পুরোপুরি ও অবিকৃত অনুসারী হওয়াই মৌলবাদ। অর্থাৎ যখন কেউ কোন মতবাদ বা বিশ্বাসের সকল মূল বিষয় পরিপূর্ণ ও অবিকৃতভাবে অনুসরন করে, তখন তাকে সেই মতবাদ বা বিশ্বাসের মৌলবাদী বলা যায়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে মৌলবাদ অনেক প্রকারের হতে পারে। যেমন উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে-

১) ধর্মীয় মৌলবাদ।

এটারও আবার অনেক সাব ক্যাটেগোরি থাকতে পারে। যেমন, হিন্দু মৌলবাদ, ইসলামিক মৌলবাদ, খ্রীষ্টীয় মৌলবাদ ইত্যাদি।

এই গ্রুপের মৌলবাদীরা নিজের ধর্মকে অভ্রান্ত ও একমাত্র সত্য বলে মনে করে এবং অন্য ধর্মসমূহকে  ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট  হিসেবে দেখে।

২) বৈজ্ঞানিক মৌলবাদ

এরা সবসময় "বিজ্ঞানের দাড়িপাল্লা" নিয়ে চলাফেরা করে। সবকিছুকেই এরা এদের দাড়ি-পাল্লায় মেপে দেখতে চায়। এদের দাড়ি-পাল্লায় কোন কিছু না মিললে তাকে এরা ব্যাকডেটেট মনে করে বাঁকা চোখে তাকায়।

৩) প্রগতিশীল মৌলবাদ

এই শ্রেনীর মৌলবাদীরা নিজেদেরকে সবসময় সবাত্তে একধাপ বেশি বোঝনেওয়ালা মনে করে। এরা সমাজে শত বছর ধরে চলে আসা ট্রাডিশনাল নর্মস, ভ্যালু ও ধর্মকে প্রগতির পক্ষে বাঁধা মনে করে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চায়। এরা সবসময় বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে ওকালতি করে।

৪) মাক্সীয় মৌলবাদ

এরা দুনিয়ার সব সমস্যার পিছনে পুঁজিবাদী ভূত দেখে। পুঁজিবাদ উৎখাত করে একমাত্র সমজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দুনিয়ার সব সমস্যা সমাধানের স্বপ্ন দেখে।

এবার মৌলবাদ নিয়ে কেতাবি আলোচনার বাইরে এর ব্যবহারিক দিক নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

মৌলবাদীরা নিজেদের মতবাদ/বিশ্বাসকে শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র সত্য মনে করে এবং অন্যসব মতবাদকে ভ্রান্ত ও ক্ষেত্রবিশেষ ক্ষতিকর মনে করে। ফলে অনেক সময় ভিন্ন মতবাদ/বিশ্বাসকে গলা চেপে হত্যা করাকে পূন্য মনে করে।

এছাড়া, মৌলবাদের সাথে গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা ও উগ্রতার একটা গলায় গলায় দোস্তীর সম্পর্ক দেখা যায়। সম্পর্কটা সরাসরি হয়ত বলা যায় না আবার অস্বীকারও করা যায় না। অনেকটা সিগারেটের সাথে ক্যানসারের সম্পর্কের মত। এ পর্যন্ত কোন গবেষনাই সিগারেটকে ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী করতে পারে নাই তবে সব ক্যানসারের পিছনেই সিগারেটের একটা অসাধু সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।

এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হল, মৌলবাদ ভাল নাকি খারাপ?

এক কথায় এর উত্তর দেয়া খুবই কঠিন। নিঃসন্দেহে এটা একটা বিতর্কের বিষয়। তবে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য মৌলবাদকে দুই ভাগে ভাগ করে নিতে পছন্দ করি।

১) সফটকোর মৌলবাদী - এরা নিজেদের মতবাদকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করলেও অন্যের উপর তা জোর করে চাপিয়ে দিতে আগ্রহী না। এরা ভিন্নমতকে ভিন্নমত দিয়েই মোকাবেলা করতে চায়, চাপাতি দিয়ে নয়।

২) হার্ডকোর মৌলবাদী - এরা নিজেদের মতবাদকে শুধু সেরাই মনে করে না, অন্য সব মতবাদকে ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর মনে করে। এরা ভিন্নমতকে ভিন্নমত বা যুক্তি দিয়ে নয় বরং চাপাতি দিয়ে মোকাবেলা করে অন্যের উপর নিজেদের মতবাদ চাপিয়ে দিতে আগ্রহী হতে দেখা যায়।

এদের মধ্যে প্রথম গ্রুপ সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হলেও দ্বিতীয় গ্রুপটি সুস্থ সমাজের জন্য ক্ষতিকর।  সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে, কোন মৌলবাদের সাথে যদি অশিক্ষা, কুসংস্কার ও চরমপন্থা মিশে যায় তাহলে সেটা পুরো মানবজাতির জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে।

সর্বশেষ প্রশ্ন, তাহলে আমরা সবাই কি কোন না কোনভাবে মৌলবাদী?

এটিও বিতর্কের বিষয় হতে পারে। তবে, এখানে মৌলবাদের বিপরীতে উদারতাবাদ নিয়ে আসা যেতে পারে। উদারতাবাদ বলতে আমি বোঝাচ্ছি পরমতসহিষ্ণুতা, অর্থাৎ অন্যের মতবাদ/বিশ্বাসকে খাটো না করে, এবং অন্যের কোন ক্ষতির কারন না হয়ে যে কোন মতবাদ অনুসরন করা অথবা নির্দিষ্ট কোন আদর্শ ছাড়াই নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী জীবন-যাপন করা।

এলোমেলো ভাবনা (৭)

(১) যে সম্পর্কে মান-অভিমান থাকেনা, তাকে কোনভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বলা যায় না। বড়জোড় তাকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বলা যেতে পারে।

(২) নীরবতা ও হাসি চমৎকার দুটি জিনিস। ছোট একটা হাসির মাধ্যমে যেমন অনেক সমস্যা সমাধান করা যায় তেমনি একটু নীরবতার মাধ্যমে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়।

(৩) ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহনের উপায় দুইটি। অন্যের ভুল দেখে শেখা আর নিজে ভুল করে শেখা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম পদ্ধতিটা অধিকতার যুক্তিযুক্ত হলেও বেশিরভাগ মানুষ দ্বিতীয় পদ্ধতিটাকেই কেন যেন বেশি পছন্দ করে।

(৪) তারুণ্যের ধর্মই হচ্ছে ভুল করা আর শেখা। তারপর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

(৫) কোন কিছু কেনার আগে ভেবে দেখা উচিত যে তা না কিনলে কী ক্ষতি হবে আর কিনলে কী লাভ হবে!

(৬) অদৃশ্য ঐশ্বরিক শক্তি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান হচ্ছে ধর্ম। অন্যদিকে চিন্তা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান হচ্ছে দর্শন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষনা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞান।

(৭) ব্যাস্ততা একটা অজুহাত মাত্র। কোন কিছু করা বা না করা আসলে অগ্রাধিকারের বিষয়।

(৮) সম্মান পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তারাই যারা অন্যকে সম্মান করে।

(৯) অদৃশ্য ভয় থেকেই কুসংস্কার সৃষ্টি ও পালিত হয়।

(১০) দুশ্চিন্তা করা সময় ও স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় অপচয়।