Monday, August 29, 2016

মেয়ে শুনে রাখো, পেশাগত জীবনে সফল ব্যক্তিরা কিন্তু স্বামী হিসেবে ভাল হয় না! ;)

সেদিন মাস্টার্সের ক্লাসে 'সিগমুন্ড ফ্রয়েড' পড়াতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত প্রফেসর সমাজবিজ্ঞানী মাহবুব উদ্দীন স্যার বললেন, "পেশাগত জীবনে সফল ব্যক্তিরা কখনো ভাল স্বামী হতে পারে না।"

কেননা একজন সফল একাডেমিশিয়ান, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী বা খেলোয়াড়কে তার পেশাগত জীবনে সফল হতে হলে তার পিছনে তাকে প্রচুর সময় দিতে হয়। আর পেশাগত জীবনে অধিক সময় ব্যয় করা মানে স্ত্রী বা পারিবারিক কাজকর্মে কম সময় দেয়া।

আর ছেলেদেরও এই কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে এই সূত্র আধুনিক কালের উচ্চশিক্ষিতা পেশাগত জীবনে সফল বউদের ক্ষেত্রেও কিন্তু সমভাবে প্রযোজ্য। ;)

Monday, August 8, 2016

বুক রিভিউ: সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা

মানব জাতির ইতিহাস হাজার বছর ধরে সভ্যতার উত্থান ও পতনের ইতিহাস। সভ্যতার এই উত্থান-পতনের ইতিহাস রচনায় মানুষের ভূমিকাই প্রধান। মানুষের দায়িত্ববোধের দ্বারা কর্তব্য-কর্মের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। তেমনি আবার এই মানুষের দায়িত্বহীন কর্মের কারণেই সমাজের সমূহ ক্ষতি সম্পন্ন হয়। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। মানব সভ্যতা টিকে থাকবে কি থাকবে না বা সভ্যতার গতিপথ কোন দিকে তা এই প্রত্যয়সমূহের বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই বোঝা সম্ভব।

ড. ইব্রাহিম মুকুল রচিত "সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা" বইটি একটা নন-ফিকশন বা অ-কথাসাহিত্যিক বই। বইটিতে কিছু কিছু  যায়গায় নানা ধরনের তথ্য, পরিসংখ্যান, রেফারেন্সের ব্যবহার দেখা গেলেও কোন ধরনের রিসার্চ মেথডলজি বা রিসার্চ ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়নি বিধায় একে গবেষণাধর্মী বই বলার সুযোগ নাই।

"সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা" প্রকৃতপক্ষে কোন মৌলিক বই নয়। এটি মূলত সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ নিয়ে লেখকের নিজস্ব ভাবনার আলোকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে প্রকাশিত এবং রেডিও থেকে প্রচারিত কতিপয় নির্বাচিত প্রবন্ধের সংকলন।

কল্যানের প্রচেষ্টা আর উন্নয়নের পথযাত্রাকে সহজ-সরল এবং প্রশস্ত করার মহান উদ্দেশ্য নিয়েই লেখকের এই 'সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ' বিষয়ক ভাবনা। "মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান" এই সার্বজনীন দায়বদ্ধতা থেকে মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তির লক্ষে ভাষাহীন কুড়েঘরের মানুষের অব্যক্ত কথা জাতির বিবেকের কাছে তুলে ধরতে লেখক কলম তুলে নিয়েছেন।

সংকলিত নিবন্ধগুলো সময়ের দীর্ঘ পরিসরে  রচিত নানামুখী চিন্তা ও ভাবনার ফসল। সময়ের ব্যবধান, বিষয় ও ক্ষেত্রগত ভিন্নতর কারনে নিবন্ধগুলোতে ভাবনার ধারাক্রম এবং যুক্তির পরস্পরা রক্ষিত না হলেও পাঠকের সুবিধার্থে রচনাগুলোকে শ্রেনীবিন্যাস করে বিষয়ভিত্তিক চারটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। অধ্যায়গুলো হল-

১) সমাজ-সংস্কৃতি ভাবনা
২)রাজনীতি ভাবনা
৩)অর্থনীতি ভাবনা ও
৪)পরিবেশ ভাবনা

প্রথম অধ্যায়ে সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে লেখকের ভাবনাগুলোকে একত্রিত করা হয়েছে। এ অংশে লেখক জাতীয় জীবনে  আদর্শ, সততা, ন্যায়-নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা, শিশুদের সঠিক সামাজিকীকরণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুদের অগ্রাধিকার ও সার্বিক কর্মপরিকল্পনায় শিশুকল্যাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
জাতীয় উন্নতিতে স্বার্থচিন্তার প্রভাব; দেশ গঠনে সরকার, প্রজাতন্তের কর্মচারী ও সিভিল সোসাইটির ভূমিকা; বাঙালির স্বজাত্যবোধের উজ্জ্বল প্রতীক ও সার্বজনীন জাতীয় উৎসব পহেলা বৈশাখ এবং একুশের তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ঘরে তুলতে শিক্ষক, ছাত্র সমাজ ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখকের রাজনীতি ভাবনা সংকলিত হয়েছে। এ অংশে লেখক দর্শনবিহীন এবং পেশিশক্তি ও পারিবারিক ইতিহাস নির্ভর রাজনীতির সমালোচনা করে  রাজনীতিতে সততা, নৈতিকতা ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চার মাধ্যমে জনগনের কল্যান সাধনের কথা বলেছেন।
প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির সমালোচনা করে, সোনার বাংলাদেশ গড়তে তিনি প্রতিহিংসামুক্ত, উদার এবং মেধানির্ভর উন্নয়নমুখী রাজনীতি চর্চার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করেন, ছাত্রদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করা এবং পড়াশুনা শেষে দেশ গঠনে আত্বনিয়োগ করা। তিনি অবশ্য জাতীয় দুর্যোগ বা জাতীর ক্রান্তিকালীন সময়ে ছাত্রসমাজের বিশেষ ভূমিকা পালনের গুরুত্বের কথা অস্বীকার করেন নি। তবে নিয়মিত রাজনীতিতে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া, জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলেছেন। পাশাপাশি সমাজ থেকে অপরাধীদের নির্মূল করতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সন্ত্রাসের প্রতিরোধমূলক ও চিকিৎসামূলক (curative) ব্যবস্থা যুগপৎভাবে কার্যকর রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

তৃতীয় অধ্যায়ের অর্থনীতি ভাবনায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় একমুখী নগরমুখী উন্নয়নের পরিবর্তে গ্রামীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতি বিকাশে সমবায়ের ভূমিকা, বাজেট প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহনের গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে রফতানি বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, এই অধ্যায়ে বড় অংশজুড়ে বীমা শিল্প, বীমা শিল্পের নানাদিক, বীমা শিল্পে নীতি-নৈতিকতার গুরুত্ব ও অর্থনীতিতে বীমা শিল্পের ভূমিকা ও গুরুত্বের কথা চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

চতুর্থ ও সর্বশেষ অধ্যায়ে লেখকের পরিবেশ ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে। এ অধ্যায়ে লেখক সুন্দর ও নিরাপদ বিশ্ব গড়তে পরিবেশ সংরক্ষনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পরিবেশ ধংস করে উন্নয়নের সমালোচনা করে লেখক উন্নয়নের সামগ্রিক ও সার্বজনীন ধারনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরিবেশ দূষন, কীটনাশকের যাচ্ছেতাই ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, জীবন ও পরিবেশের উপর পলিথিন-জাত দ্রব্যাদি ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা করে পরিবেশ সংরক্ষনে জনসচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

আলোচিত  বইটিতে লেখকের কোন বিশেষ আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ না পেলেও সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ বিষয়ক ভাবনাগুলো তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।

ড. ইব্রাহিম মুকুল ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক ক্যাডারসহ তথ্য, শিক্ষা, বস্ত্র, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এছাড়া, রয়্যাল ট্রপিকাল ইনস্টিটিউট, আমস্টার্ডাম, হল্যান্ডেও গেস্ট লেকচারার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পরিবেশ, কিশোর অপরাধ, সমাজ ও উন্নয়নের মত বিশ্বজনীন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় সহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে ইংরেজী ও বাংলা জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করছেন।

ভ্রমণ, শিক্ষা ও পেশাগত কারনে তিনি পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, জার্মানী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমন করেন।  এসব দেশ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার নিদর্শন তার লেখালেখিতে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।

সৃজনশীল ও প্রগতিশীল প্রকাশনা হিসেবে রিদম প্রকাশনা সংস্থার সুনাম রয়েছে। ড. ইব্রাহীম মুকুলের "সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা" বইটি প্রকাশ সংস্থাটির সৃজনশীল মহৎ উদ্যোগের একটি অনন্য উদাহরন।

২০০৭ সালে প্রকাশিত ২১০ পৃষ্ঠার আলোচিত এই বইটির গেটাপ-মেকাপ যথেষ্ঠ আকর্ষণীয়। প্রকাশনা সংস্থাটি যত্নের সাথে বইটি প্রকাশ করেছে তা সহজেই বলা যায়। যদিও বইটিতে কিছু যায়গায় বানান বিভ্রাটও চোখে পড়ে।

সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ প্রত্যয় চারটি বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয়। কেননা এই চারটি বিষয়ের উপরই মানব সভ্যতা টিকে থাকার রহস্য নিহিত আছে। সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে লেখক বইটিতে এই চারটি বিষয়কেই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

মানব সভ্যতার গতিপথ সহজ, সরল ও নিষ্কণ্টক রাখতে লেখকের এই প্রয়াস প্রশংসার দাবী রাখে। বইটিতে বিষয়বস্তুসমূহের ধারাবাহিক অনুক্রম ও যুক্তির পরস্পরা পুরোপুরি রক্ষিত না হলেও তাতে কল্যাণের আকাংখ্যায় জাগ্রত চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়।

বইটিতে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ বিষয়ে লেখকের নানা মতামত ও সুপারিশ লক্ষ করা যায়। নি:সন্দেহে এসব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনার দাবী রাখে। ১৯৮৯ সালে জীবন ও পরিবেশের উপর পলিথিন দ্রব্য ও ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে A Remedy For Silent Hazard এবং ১৯৯০ সালে কীটনাশকের ব্যবহার এবং পরিবেশ ও টেকশই উন্নয়বের উপর The Environment & Sustainable Development শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে পলিথিন-জাত দ্রব্যাদির ব্যবহার বন্ধের আহবান জানানোর প্রায় দেড় যুগেরও অধিক সময়ের পর নীতি-নির্ধারন কর্তৃপক্ষ পলিথিন দ্রব্যাদির ব্যবহার নিষিদ্ধকরণসহ পরিবেশ রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব বিষয় থেকে লেখকের গভীর দৃষ্টিভঙ্গির তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়।

ড. ইব্রাহীম মুকুল বইটিতে পাঠকদের কিছু নতুন চিন্তার সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। ৮০ এর দশকে প্রকাশিত পলিথিন দ্রব্য ও ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব  নিয়ে তার চিন্তাভাবনাকে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে নতুন চিন্তা-ভাবনাই বলতে হবে। এছাড়া, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তার চিন্তাভাবনাকে নতুন না বলে উপায় নাই। ৫২, ৬২, ৬৯, ৭১, ৯০ এ রাজনীতির মাঠে অসাধরন ভূমিকা সত্ত্বেও তিনি ছাত্রদের নিয়মিত রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ড. আকবর আলি খানের "অন্ধকারের উৎস হতে – সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতি সম্পর্কে আলোর সন্ধান" বইটির সাথে ড. ইব্রাহীম মুকুলের "সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা" বইটির কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে।

"অন্ধকারের উৎস হতে – সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতি সম্পর্কে আলোর সন্ধান" গ্রন্থটি অর্থনীতিবিদ ও সাবেক আমলা ডঃ আকবর আলি খানের দীর্ঘ গবেষণার ফসল। যদিও গ্রন্থটি বেশ কিছু জটিল বিষয়ের প্রবন্ধে সমৃদ্ধ, তারপরও গবেষণা গ্রন্থের কঠিন কঠোর ভাব এতে নেই। বরং বলা চলে সাধারণ পাঠকের জন্যই লেখক অনেক যত্নের সঙ্গে প্রবন্ধগুলো রচনা করেছেন। নামকরণ প্রসঙ্গে বইয়ের লেখক ভূমিকায় লিখেছেন, “অন্ধকারে উৎস হতে বাঙালি জীবনের কিছু জটিল ও দুর্জ্ঞেয় প্রহেলিকা সম্পর্কে আলোর অন্বেষা”। সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির দুর্গম অঞ্চলে আলো জ্বালিয়ে নতুন কিছু দিক উদ্ভাসিত করার সচেতন প্রয়াস দেখা যায় আলোচ্য গ্রন্থে। ড. খানের এই বইটিতে ছয়টি প্রবন্ধ রয়েছে। যাদেরকে লেখক চারটি ভাগে ভাগ করেছেন- সাহিত্য, সমাজ ও রাষ্ট্র, পরিবেশ এবং অর্থনীতি নামে। যদিও বিষয়বস্তুগুলোর নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য মিল নেই, তারপরও প্রতিটি প্রবন্ধই পাঠকের সমান মনোযোগ আকর্ষণ করে।

ড. খানের বইটির সাথে ড. মুকুলের বইটির উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে ড. খানের রচনাগুলো গবেষনাধর্মী দীর্ঘ প্রবন্ধ। যার প্রতিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গভীর দৃষ্টিপাত পাওয়া যায়। অন্যদিকে ড. মুকুলের বইয়ের প্রবন্ধগুলো মূলত দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ইস্যু ভিত্তিক  মতামত ধরনের ছোট ছোট প্রবন্ধের সংকলন।

বইয়ের নাম: সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পরিবেশ ভাবনা।
লেখক: ড. ইব্রাহীম মুকুল
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২১০
প্রকাশকাল: ২০০৭
প্রকাশনা: রিদম প্রকাশনা সংস্থা, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
মূল্য: ২০০ টাকা মাত্র
ISBN: 984-8319-67-0

বিঃদ্রঃ এক আপুর অনুরোধে ঢেকি গেলার উদাহরন হচ্ছে দীর্ঘ এই রিভিউটা। ;)

Monday, July 11, 2016

"মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে আপনি 'হেইট স্পিচ' প্রচার করা বা যা ইচ্ছা তা বলতে পারেন না।"

ব্লগার ইস্যুতে ধার্মিক/রক্ষণশীলদের এই যুক্তি দিতে দেখা গেলেও জাকির নায়েক ইস্যুতে এখন তারা মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার কথা বলতেছেন। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল মুক্তমনাদের এখন আবার এই নায়েক ইস্যুতে রক্ষণশীলদের সেই যুক্তি™ আবৃত্তি করতে দেখা যাচ্ছে। ;)

#সমাজচিন্তা
#পর্যবেক্ষণ

Saturday, June 25, 2016

নারী হয়েও নারীরা যে কারনে নারীবাদ বিদ্বেষী হতে পারে!

নারীবাদ কোন শারীরিক বিষয় না, এটা আদর্শিক ব্যাপার। নারী হয়েও তাই যে কেউ নারীবাদ বিদ্বেষী হতে পারে। লুকাসের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের সমাজের সব নারীরা আসলে নারী নয়। তারা নারী দেহের বৈশিষ্ট্যর আড়ালে পুরুষতন্ত্র ধারণকারী একেকজন পুরুষ।

#সমাজচিন্তা
#নারীবাদ
#Reification

Friday, May 20, 2016

ভিন্নমতের সাথে ভিন্নমত দিয়েই লড়তে হয়, চাপাতি বা পুলিশ দিয়ে নয়!

ভিন্নমত হচ্ছে সেই মত যেটা আপনার পছন্দ না অথবা সেই কথা যেটা ক্ষমতাসীন শ্রেনী বা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক শুনতে চায় না।

ভিন্নমতকে আপনি সম্মান করবেন নাকি করবেন না এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো মতামতকে বিশ্বাস করা বা না করা অথবা তাতে সহমত বা দ্বিমত পোষণ করার পূর্ণ অধিকার আপনার রয়েছে।

তবে সমাজের সবার স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকতে হবে। আপনার কাছে সেই মত যত ফালতু বা আপত্তিকরই হোক না কেন। ভিন্নমত হতে হইলে যে তা ক্ষমতাসীন শ্রেনী, কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা  আপনার দৃষ্টিতে যৌক্তিক, বৈজ্ঞানিক বা সত্য হতে হবে এমনটি মনে করার কোন কারন নাই। ভিন্নমত সবসময় ভিন্নমতই, একে সঠিক/বেঠিকের বাটখারা দিয়ে পরিমাপ করার ব্যার্থ চেষ্ঠা করে লাভ নাই। করলে সেটা কেবল বিতর্ক আর জটিলতাই বাড়াবে, কোন সমাধান বয়ে আনতে পারবেনা।

প্রয়োজনে আপনি চাইলে সেই মতের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বা অসভ্যদের মত গালি দিয়েও পাল্টা মতামত প্রকাশ করতে পারেন অথবা ইগনোর করে যেতে পারেন। কিন্তু কোনভাবেই ভিন্নমতের টুটি চেপে ধরার কোন অধিকার আপনার বা কারো নাই।

মনে রাখতে হবে, সত্য সবসময় সত্যই। হাজারো মিথ্যা যেমন একে চিরকাল ঢেকে রাখতে পারে না, তেমনি জনগনের টুটি চেপে ধরেও সত্যকে চিরকাল গোপন রাখা যায় না। তাই, সমাজে সবার স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকুক। যেটা সত্য সেটাই সমাজে টিকে থাকবে বাকিগুলো খড়কুটোর মতো ইতিহাসের অতল গহবরে হারিয়ে যাবে।

সবশেষে জনৈক তরুণ দার্শনিকের ভিন্নমত বিষয়ক কয়েকটি বাণী দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। ;)

"ভিন্নতা বা বৈচিত্রতাই সুন্দর। অসুন্দর বলতে যদি কিছু থাকে, তবে সেটা হচ্ছে হোমোজিনিটি বা অভিন্নতা।"

"ভিন্নমতের সাথে ভিন্নমত দিয়েই লড়তে হয়, চাপাতি বা পুলিশ দিয়ে নয়।"

"সমাজবিজ্ঞান চর্চার জন্য ভিন্নমত জরুরি, একমত না।"

#ভিন্নমত
#সমাজচিন্তা
#FreedomOfSpeech

Saturday, May 14, 2016

ইয়াগফিরুল্লাহি লানা ওয়ালাকুম!

দীর্ঘ ১৩০ দিন পর আজ বাসায় আসলাম। বাসায় ঢুকেতেই বাবার সাথে দেখা। সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেইক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেই বাবার প্রশ্ন..."বলোতো, মোসাফাহার (হ্যান্ডশেইক) দোয়া কী?" প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলাম। মুখে সবজান্তার হাসি ফুটিয়ে তিন আলিফ টান দিয়ে বললাম, এটাতো দৈনন্দিন আমলের বিষয়, এটা কি কেউ ভোলে? ;) যদিও দোয়াটা তৎক্ষণাৎ মনে ছিল না কিন্তু ইন দ্য মিন টাইম মাথায় গুগলিং করতেই মনে পড়ে গেল। বললাম, 'ইয়াগফিরুল্লাহি লানা ওয়ালাকুম'। ছেলের এহেন সফলতায় বাবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ;)

Tuesday, March 8, 2016

নারী দিBoss!

নারী-পুরুষের বৈষম্য বা অসমতার প্রধান কারন পুরুষতান্ত্রিকতা। যুগযুগ ধরে লালিত-পালিত নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিনাশ ছাড়া নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব না।

আমাদের দেশের কেউ কেউ আবার মনে করেন পুরুষতান্ত্রিকতার বিপক্ষে কথা বলা মানে নারীতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। মনে রাখতে হবে, পুরুষতান্ত্রিকতার বিনাশ চাওয়া মানে তা কোনভাবেই নারীতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চাওয়া নয়। নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে এখনকার নারীদের মত আবার পুরুষদের তাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হবে। তাই, নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোন সমাধান না।

আসলে নারীতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র নয়, সত্যিকার সমাধান চাইলে মানুষতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই। এমন মানুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে সমাজে নারী-পুরুষের অধিকারের মধ্যে কোন ভেদাভেদ, বৈষম্য বা পার্থক্য থাকবেনা। সমাজের সাধারন সদস্য হিসেবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করার অধিকার ভোগ করবে।

আজ ৮ই মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিBoss! সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

Thursday, February 25, 2016

রাজনীতিতে 'ডানপন্থী/বামপন্থী' এর ধারনা কোথা থেকে এলো?

রাজনৈতিক আলোচনায় 'ডানপন্থী' বা 'বামপন্থী' শব্দ দুটি খুবই আলোচিত বিষয়। আর এই প্রত্যয় দুটি কোথা থেকে ও কিভাবে আসলো তার এক মজার ইতিহাস রয়েছে।

ডানপন্থী' বা 'বামপন্থী' প্রত্যয় দুটির উৎপত্তি ফরাসি বিপ্লবের সময় (১৭৮৯-১৭৯৯)। তৎকালীন সময়ে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে ফরাসী রাজার সিংহাসন/চেয়ারের বামপাশে যারা বসতো তাদেরকে বামপন্থী আর যারা ডানপাশে বসতো তাদেরকে ডানপন্থী বলে অভিহিত করা হত।

বামপন্থীরা মূলত ফরাসি রাজতন্ত্রের বিরোধী এবং ফরাসি রিপাবলিক ও আসন্ন বিপ্লবের পক্ষে ছিল। অন্যদিকে ডানপন্থীরা বিদ্যমান ফরাসি রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিল।

বর্তমানে, ডানপন্থী বলতে বোঝায় যারা রক্ষনশীল, বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থার পক্ষে ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির পক্ষে কথা বলে। এছাড়া ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকেও ডানপন্থী হিসেবে অভিহিত করা হয়।

অন্যদিকে, বামপন্থী বলতে বোঝায়  যারা প্রগতিশীল, বিদ্যমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তন বা আমূল সংস্কারের পক্ষে ও সামাজিক সমতার কথা বলে।

Sunday, February 21, 2016

একুশের চেতনা কোথায়?

বাঙালি ইতিহাস সচেতন জাতি না। ইতিহাস সচেতন হলে অন্তত তারা আদিবাসীদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে কার্পন্য করতো না।

যারা মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য জীবন উৎসর্গ করল, অথচ তারাই আবার স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশী অবাঙালি আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করতে পারলোনা।

লজ্জা! এ আমাদের জাতীয় লজ্জা!

এলোমেলো ভাবনা (১৪)

(১) ম্যাচুরিটি বয়সের সাথে নয়; অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। যার অভিজ্ঞতা যত বেশি, সে ততোবেশি ম্যাচিউরড।

(২) চিন্তা-ভাবনা আর যুক্তির আলোকে যেটা বলা হয় তাকে দর্শন বলা যেতে পারে; সমাজবিজ্ঞান না। সমাজবিজ্ঞান হতে হলে তার পিছনে অবশ্যই ডেটা বা তথ্য-প্রমান থাকতে হবে।

(৩) ভিন্নমতের সাথে ভিন্নমত দিয়েই লড়তে হয়, চাপাতি বা পিস্তল দিয়ে নয়।

(৪) আগেকার বাঙালি সমাজে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কাছে ছিলেন একচ্ছত্রভাবে গুরু এবং শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু উপমহাদেশে ইংরেজরা শাসনক্ষমতায় আসার পর থেকে ধীরে ধীরে তারা বন্ধু ও প্রেমিকে পরিনত হতে শুরু করেন।

(৫) যে যা না, তা হওয়ার ভান করাটা হাস্যকর।

(৬) পাক-ভারত উপমহাদেশে সতীদাহ প্রথা থাকলেও পতিদাহ প্রথা কেন ছিল না?

(৭) মার্ক্সবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সবখানে অর্থনীতি দেখে এবং অর্থনীতি পরিবর্তন হলে দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করে।

কিন্তু মানুষের জীবনে অর্থনীতি বড় ভূমিকা রাখলেও এটাই একমাত্র শেষকথা না। ব্যক্তি মানুষের জীবনে আবেগ-অনুভূতি, সংস্কৃতি-ইডিওলজি মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

(৮) পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা নারীদের টাকা, গায়ের জোর এবং ধর্মের নামে বন্দী করে রাখে। কাজেই এই তিন ক্ষেত্রে নারীরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে না পারলে তাদের মুক্তি নাই।

(৯) সমাজবিজ্ঞান আর সমাজচিন্তা আমার কাছে এক নয়।

সমাজবিজ্ঞান হতে হলে অবশ্যই তার পিছনে ডেটা বা তথ্য-প্রমান থাকতে হবে। আর সমাজচিন্তা হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। এটাকে সমাজবিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্পের হাইপোথিসিস বা অনুমান বলা যেতে পারে।

(১০) ঘরবউ থাকা যদি দোষের না হয়; তাহলে ঘরজামাই থাকা কেন দোষের হবে?

Monday, February 8, 2016

বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের কোন সম্পর্ক আছে কি?

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গত এক বছরে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। আর এর ৯০ শতাংশই হয়েছে নারীদের উদ্যোগে অর্থাৎ নারীরাই তাঁদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)

এছাড়া, গত ২০১৪ সালে শুধু ঢাকায় ৬০ হাজার ডিভোর্স বা নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে (সূত্র: সমকাল)। পুরো দেশকে হিসেবে আনলে এই সংখা যে বিশাল আকার ধারন করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই।

বাংলাদেশে এখন নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

একসময়ে এদেশের অনেকে পশ্চিমা বিশ্বের পারিবারিক বন্ধন হালকা বা ডিভোর্সি পরিবারের সংখ্যা বেশি বলে পশ্চিমাদের চেয়ে আমাদের সমাজ অনেক ভাল আছে বলে গর্ব করতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজও এখন সেদিকে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে পারিবারিক বন্ধন এখনো খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে কেন? আর বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়া আসলে কী নির্দেশ করে?

ডিভোর্স লেটারে নারীরা তাঁদের স্বামীদের তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদকাসক্তি ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের পিছনে কি শুধুই এসব কারন জড়িত নাকি এর পিছনে আরো কারন রয়েছে?

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে ৮৭ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এখানে নির্যাতন বলতে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, নারী নির্যাতন কি শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়ে হচ্ছে? অতীতে কি নারী নির্যাতন হতো না? কেউ কেউ বলেন, অতীতে নারী নির্যাতন হলেও তার পরিমান সাম্প্রতিক সময়ের মত এত বেশি ছিল না। নারীবাদীরা অবশ্য বলেন, নারী নির্যাতন এখনকার মত আগেও ছিল। পার্থক্য হচ্ছে আগে এসব নির্যাতনের কথা রিপোর্টিং হতো না কিন্তু এখন বিভিন্ন এনজিও এবং গনমাধ্যমের কল্যানে সেটা প্রকাশিত হচ্ছে।

এবার আমার আসল কথায় আসি, মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের একটা ইন্টারেস্টিং সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দরিদ্র এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন যত বাড়ছে, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা তত বাড়ছে।

এর কারন হিসেবে বলা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তার, অর্থনৈতিক কাজে নারীর অংশগ্রহণের ফলে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ফলে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে নারী এখন স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। আগের মত স্বামীর/শশুর বাড়ির নির্যাতন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেনা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় নারী নিজের জীবন নিজের মত করে নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে পারছে।