Monday, February 8, 2016

বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের কোন সম্পর্ক আছে কি?

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গত এক বছরে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। আর এর ৯০ শতাংশই হয়েছে নারীদের উদ্যোগে অর্থাৎ নারীরাই তাঁদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)

এছাড়া, গত ২০১৪ সালে শুধু ঢাকায় ৬০ হাজার ডিভোর্স বা নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে (সূত্র: সমকাল)। পুরো দেশকে হিসেবে আনলে এই সংখা যে বিশাল আকার ধারন করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই।

বাংলাদেশে এখন নারী কর্তৃক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

একসময়ে এদেশের অনেকে পশ্চিমা বিশ্বের পারিবারিক বন্ধন হালকা বা ডিভোর্সি পরিবারের সংখ্যা বেশি বলে পশ্চিমাদের চেয়ে আমাদের সমাজ অনেক ভাল আছে বলে গর্ব করতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজও এখন সেদিকে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে পারিবারিক বন্ধন এখনো খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে কেন? আর বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়া আসলে কী নির্দেশ করে?

ডিভোর্স লেটারে নারীরা তাঁদের স্বামীদের তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদকাসক্তি ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের পিছনে কি শুধুই এসব কারন জড়িত নাকি এর পিছনে আরো কারন রয়েছে?

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে ৮৭ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। এখানে নির্যাতন বলতে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, নারী নির্যাতন কি শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়ে হচ্ছে? অতীতে কি নারী নির্যাতন হতো না? কেউ কেউ বলেন, অতীতে নারী নির্যাতন হলেও তার পরিমান সাম্প্রতিক সময়ের মত এত বেশি ছিল না। নারীবাদীরা অবশ্য বলেন, নারী নির্যাতন এখনকার মত আগেও ছিল। পার্থক্য হচ্ছে আগে এসব নির্যাতনের কথা রিপোর্টিং হতো না কিন্তু এখন বিভিন্ন এনজিও এবং গনমাধ্যমের কল্যানে সেটা প্রকাশিত হচ্ছে।

এবার আমার আসল কথায় আসি, মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদের সাথে নারীর ক্ষমতায়নের একটা ইন্টারেস্টিং সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দরিদ্র এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, যেখানে নারীর ক্ষমতায়ন যত বাড়ছে, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা তত বাড়ছে।

এর কারন হিসেবে বলা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তার, অর্থনৈতিক কাজে নারীর অংশগ্রহণের ফলে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। ফলে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে নারী এখন স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। আগের মত স্বামীর/শশুর বাড়ির নির্যাতন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেনা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় নারী নিজের জীবন নিজের মত করে নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে পারছে।

No comments:

Post a Comment