Wednesday, July 19, 2017

কোন কিছুতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলে সেটা অপ্রিয় হয়ে যায়

গল্প, উপন্যাস, কবিতা পড়তে আমাদের সবারই কম-বেশি ভালো লাগে। আবার সেই একই গল্প, উপন্যাস বা কবিতা যখন স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচি বা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন আর সেটা পড়তে ইচ্ছে করেনা।

এর কারন সম্ভবত মানুষের স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্য।  স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া মানুষ অধীনতাকে সহজে মেনে নিতে পারে না। তাই, সাধারনভাবে আউট বইয়ের গল্প-উপন্যাস পড়তে ভাল লাগলেও সিলেবাসের নামে চাপিয়ে দেয়া গল্প-উপন্যাস  পড়তে আমাদের ভালো লাগে না।

বাধ্যবাধকতা আরোপ বেশিরভাগ সময়ই উলটো ফলাফল বয়ে আনে। তাই, কাউকে দিয়ে কিছু করাতে চাইলে বাধ্যবাধকতা আরোপ না করে বরং উৎসাহ দিয়ে কার্য হাসিলের চেষ্টা করাটাই অধিক ফলপ্রসূ হয়।

Monday, July 17, 2017

আধুনিক যুগের সম্পর্ক লাভ-লোকসান নির্ভর

যদিও সম্পর্কের ক্ষেত্রে আবেগের গুরুত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নাই। তবে আধুনিকতা মানুষকে অতি র‍্যাশনাল বা যুক্তিবাদী হতে শেখায়। যার কারনে এই যুগে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আবেগের চেয়ে বাস্তবতা বা লাভ-লোকসানের হিসেব-নিকেষ করতেই বেশি দেখা যায়।

আধুনিক যুগে কোন সম্পর্কে যতদিন ইউটিলিটি বা প্রয়োজনীয়তা থাকে, ততদিন তা ভালভাবে টিকে থাকে। আর যখন ইউটিলিটি শেষ হয়ে যায়, তখন সে সম্পর্কও ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়।

রাজধানী ঢাকায় আধুনিক বুকশপ ক্যাফে 'দীপনপুর'

পশ্চিমা বিশ্বে বুকশপ ক্যাফের আইডিয়া নতুন না হলেও বাংলাদেশে বুকশপ ক্যাফের আইডিয়া নতুনই বলা চলে। রাজধানি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে (কাটাবন সিগনালের কাছেই) প্রায় ২৮০০ বর্গফুটের এই বুকশপ ক্যাফে দীপনপুরের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে বই। বই কেনার পাশাপাশি এক কাপ চা বা কফি খেতে খেতে বই পড়ার চমৎকার ব্যবস্থাও রয়েছে ক্যাফেটিতে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং ওয়াইফাই সুবিধা সম্বলিত দীপনপুরে ছোটদের বই নিয়ে করা হয়েছে শিশুতোষ কর্নার দীপান্তর। বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস, চা, কফি, ফ্রেশ জুস নিয়ে দীপনপুরের ভেতরেই যে কর্ণার রয়েছে তার নাম 'দীপাঞ্জলি'। এছাড়া 'দীপনতলা' নামে ছোট একটা মঞ্চও রয়েছে।

ঢাকা শহরে বড় বড় শপিং মল, বাহারি রকমের খাবারের দোকানের অভাব না হলেও বইয়ের দোকানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর বই কেনার আগে তা নিয়ে নাড়াচাড়া করা, একটু পাতা উল্টিয়ে দেখে, পড়ে নিজের পছন্দ মত বই যাচাই করার মত সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন আধুনিক বুকশপ ক্যাফের কথাতো কল্পনাই করা যায় না। যাহোক, দেরীতে হলেও অবশেষে দীপনপুরের মাধ্যমে ঢাকার বইপ্রেমীরা আধুনিক বুকশপ ক্যাফের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

কফি খেতে খেতে বই পড়া, বই কেনা আর বই পড়ুয়া বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়ার চমৎকার জায়গা দীপনপুর। আশা করি, আধুনিক বুকশপ ক্যাফে দীপনপুর বইপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে।

Thursday, June 15, 2017

ক্রিকেট, ট্রল ও দেশপ্রেম!

খেলাধুলায় নিজ দেশের প্রতিপক্ষকে অশ্লীল, অপমানজনক ট্রল বা গালাগালি করাটা মোটেই দেশপ্রেমের পরিচয় না। দেশপ্রেমিক হতে হলে নাগরিক হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে হয়।

খেলাধূলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্মল বিনোদন।
আর আন্তর্জাতিক খেলাধুলার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন রাষ্ট্র বা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পারিক সম্প্রীতি ও বন্ধন গড়ে তোলা এবং তাকে শক্তিশালী করা। কিন্তু খেলাকে কেন্দ্র করে যদি পারস্পারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির চেষ্টার পরিবর্তে উল্টো জাতিবিদ্বেষ বা ঘৃনা চর্চাকে উসকে দেয়া হয় তাহলে খেলাধুলার আসল উদ্দেশ্যই মাঠে মারা যায়।

খেলাধুলায় ট্রল বা মজা করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। বিনোদনের অংশ হিসেবে ট্রল করা যেতেই পারে। তবে সেটা যেন কোন দেশ, খেলোয়ার বা জাতিগোষ্ঠীকে এমনভাবে অপমান করে না হয় যা পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ঘৃনার চর্চা উসকে দেয়।

কাজেই, খেলাধুলাকে বিনোদন হিসেবে দেখুন। আর বিনোদনকে বিনোদনের যায়গায় রাখুন। বিনোদনকে সিরিয়াস বিষয় বানানোর দরকার নাই। অতিরিক্ত সিরিয়াসনেস দেখাতে চাইলে নিজের কর্মক্ষেত্রে দেখান। তাতে দেশেরও উপকার হবে, আপনারও উপকার হবে।

চ্যাম্পিয়ন ট্রফি বাংলাদেশের হোক!
হ্যাপি ক্রিকেটিং!

Tuesday, May 23, 2017

আধুনিক প্রণয়ের সমাজতাত্ত্বিক অনুসন্ধান!

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ''পছন্দের কারো সাথে যত বেশি সময় কাটাবেন, তাকে তত বেশি ভাল লাগবে।"

আর যদি এর উল্টোটা দেখা যায় অর্থাৎ ভাল লাগার পরিমান না বেড়ে বরং কমতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনাদের দুজনেরই 'সঙ্গী নির্বাচন' ভুল ছিল।

মডার্ন রোমান্স বা আধুনিক প্রণয়ের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা জানতে আমেরিকার বিখ্যাত স্টান্ড কমেডিয়ান আজিজ আনসারি আর নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক  এরিক ক্লিনেনবার্গ কর্তৃক রচিত নিউইয়র্কের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন প্রেস থেকে প্রকাশিত Modern Romance: An Investigation  বইটি পড়তে পারেন।

বইটির অসাধারণত্ব হচ্ছে বইটি লিখতে লেখকদ্বয় সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।  আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, বইটি লেখার জন্য লেখকদ্বয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং লন্স এঞ্জেলস, ফ্রান্সের প্যারিস, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স, জাপানের টোকিও এবং কাতারের দোহায় বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার মানুষের ইন্টারভিউ আর ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন করেছেন। শুধু তাই নয়, আধুনিক রোমান্স নিয়ে এই গবেষণায় প্রতিটি রিসার্স কোয়েশ্চেন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সাইকোলজিস্ট, এনথ্রোপোলজিস্ট, সমাজবিজ্ঞানী সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা প্রফেসরদের মতামত সংযুক্ত করেছেন।

Tuesday, January 31, 2017

চিন্তার বিবর্তনের ইতিহাসঃ সমাজবিজ্ঞান কী এবং কীভাবে এলো?

প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় বসবাসকারী ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ নামক 'দ্য গ্রেট এইপ' থেকে বিবর্তিত হয়ে আদি মানবেরা সর্বপ্রথম পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। মাত্র এক লক্ষ বছর আগেও পৃথিবীতে কমপক্ষে ছয় প্রজাতির মানব বসবাস করতো। সর্বশেষ  মাত্র ৩০ হাজার বছর আগেও আধুনিক মানব 'হোমো স্যাপিয়েন্সে'র সাথে 'হোমো নিয়ান্ডারথাল'রা এই পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াতো। অন্যান্য মানব প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেলেও হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানব প্রজাতি কীভাবে টিকে গেল তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হোমো স্যাপিয়েন্সদের অসাধারন বুদ্ধিমত্তা বা চিন্তার ক্ষমতাই তাদেরকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আর এ কারনেই আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম 'হোমো স্যাপিয়েন্স' বা 'বুদ্ধিমান মানব' রাখা হয়েছে। (Harari, 2014)*

হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা চিন্তা করতে পারে। তবে এই চিন্তার ক্ষমতা কিন্তু একদিনে তৈরি হয় নি। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চিন্তার ক্ষমতা ও পদ্ধতির উন্নতি ঘটেছে। অজানাকে জানার কৌতূহল আর কোন ঘটনার পেছনের কারন জানতে চাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তি থেকেই আদিম মানুষ তার আশেপাশের 'ঘটনা' কে বোঝা বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা শুরু করে।

ধর্মতাত্তিক যুগ

আদিম সমাজে সব "ঘটনা"কে ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখা হত। অর্থাৎ কোন ঘটনার পিছনের কারন হিসেবে স্রষ্টা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হত।  যেমন- ঝড়-বৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারন হিসেবে অতিপ্রাকৃত শক্তির ইচ্ছা বলে আদিম সমাজ বিশ্বাস করত।

মেটাফিজিক্যাল যুগ

যুগ যুগ ধরে মানুষ এভাবে ধর্মতাত্ত্বিকভাবে চিন্তা করে আসছিল। তবে ধীরে ধীরে মানুষ আর "সবকিছুর পিছনের কারন হিসেবে অতিপ্রাকৃত শক্তির ভূমিকা" বিষয়ক ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। তারা ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার বাইরে গিয়ে নিজেদের মত ভাবার চেস্টা করতে শুরু করল।

মূলত এভাবেই দর্শন শাস্ত্রের প্রাথমিক উৎপত্তি হয়েছে বলা যায়। দর্শন মূলত বিশ্বজগৎ, মানুষ ও তার কর্মকান্ডকে ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার বাইরে গিয়ে জাগতিক যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। ধর্মের বাইরে গিয়ে যুক্তির আলোকে বিশ্বজগৎ ও তার কর্মকান্ডকে বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা মানব ইতিহাসের এক চরম বৈপ্লবিক পরিবর্তন। 

দর্শনের আলোচনার বিষয়বস্তু ব্যাপক। দৃশ্যমান/ অদৃশ্যমান, প্রাকৃতিক/অপ্রাকৃতিক সবকিছু নিয়ে দর্শন আলোচনা করে। এককথায় বলা যায়, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখার উৎপত্তি স্থল হচ্ছে দর্শন।

বিজ্ঞানের যুগ

এরপরে প্রকৃতি, জগত ও তার কর্মকান্ডকে  আরো ভালভাবে বোঝার জন্য বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়।
দর্শনের সাথে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মূল পার্থক্য হচ্ছে, বিজ্ঞান শুধুমাত্র বাস্তব, দৃশ্যমান (observable) বস্তু/ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে দর্শন দৃশ্যমান/অদৃশ্যমান, প্রাকৃতিক/অপ্রাকৃতিক এমনকি কাল্পনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করতে পারে।

বিজ্ঞান ও দর্শনের পর্যবেক্ষন পদ্ধতিও ভিন্ন। দর্শন সবকিছুকে শুধুমাত্র মানবচিন্তা ও যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, বিজ্ঞান সবকিছুকে আনুষংগিক তথ্যপ্রমাণ ও নানারকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করে।

দর্শনের অবজার্ভেবল বিষয়গুলোকে বিজ্ঞানের হাইপোথিসিসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ যখনই দর্শনের কোন বিষয় তথ্যপ্রমান ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে সত্য প্রমানিত হয়; তখন আর সেটা শুধুমাত্র দর্শনে সীমাবদ্ধ থাকেনা, বিজ্ঞানে পরিনত হয়।

সমাজবিজ্ঞানের আগমন

বিজ্ঞানের আবিস্কার মানব সভ্যতার এক চরম মাইলফলক। বিজ্ঞানের জয়জয়াকারের ফলে মানুষ সবকিছুকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষ, সমাজ ও তার কর্মকান্ড "বস্তুজগতের"র মত না হওয়ায় তাকে ব্যখ্যা করা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের জন্য কঠিন হয়ে দাড়ায়। ফলে উৎপত্তি হয় বিজ্ঞানের এক বিশেষ আপডেট ভার্সন সমাজবিজ্ঞান। ;)

সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ। সমাজ ও তার কর্মকাণ্ডকে নিরপেক্ষভাবে দেখার এবং ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞানের নাম সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান মানুষের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মকাণ্ডের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে। মানুষের আচার-অনুষ্ঠান ও কর্মকান্ডের উপর সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রভাব নিয়েও সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। যেমন- আত্মহত্যাকে ব্যক্তিগত কারন হিসেবে মনে করা হলেও সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তার সামাজিক গবেষনার মাধ্যমে প্রমান করে দেখান যে আত্মহত্যার পিছনে শুধু ব্যক্তিগত কারনই নয়; এর পিছনে নানা সামাজিক কারণ জড়িত রয়েছে।

সমাজবিজ্ঞান অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে গবেষনা করেনা। তবে সমাজে বিদ্যমান "অতিপ্রাকৃত" বিষয় সমূহের প্রভাব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কি নাই তা প্রমান বা অপ্রমান করা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানের বিশেষ মাথাব্যাথা নাই। তবে স্রষ্টার অস্তিত্ত্ব বা অনস্তিত্ব বিষয়ক ধারনা সমাজে কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে তা সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষবয়বস্তু হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, সমাজবিজ্ঞানের গবেষনা পদ্ধতি বিজ্ঞানভিত্তিক হলেও তা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষনা পদ্ধতি থেকে কিছুটা আলাদা।

সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সমাজের বিভিন্ন অংশ নিয়ে অধ্যয়ন করে। যেমন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজের রাজনীতি নিয়ে, অর্থনীতি সমাজের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে এবং সামাজিক নৃবিজ্ঞান সমাজের সংস্কতি নিয়ে অধ্যয়ন করে। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের সকল শাখার মধ্যে সামগ্রিক সমন্বয় সাধন করে সমগ্র সমাজ ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করে।

সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোৎ তার বিখ্যাত "বিজ্ঞানের উচ্চক্রমে" (science of hierarchy) সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেমন গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ইত্যাদির উপরে স্থান দিয়েছেন। কারন তিনি মনে করতেন সমাজবিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞানের পরে এসেছে এবং তা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার জ্ঞানকে ব্যবহার করে সবচেয়ে জটিল বিষয় "সমাজ ও সামাজিক মানুষের আচরন ও ক্রিয়া" কে অধ্যয়ন করে মানবজাতির কল্যান সাধন করবে।

* Harari, Yuval Noah (2014). Sapiens: A Brief History of Humankind

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অপরিহার্য পাঠ্য বইয়ের প্রাথমিক তালিকা!

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নবীন ছাত্রদের পক্ষে বুঝে ওঠা কষ্টকর যে কী কী বই দিয়ে পড়া শুরু করা উচিৎ। সে যে বিষয় বা সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছে তার প্রয়োজনীয়তা কী বা কোন বিষয়ে সে বিশেষায়িত জ্ঞানী হতে চায় এটা বুঝতে হলে তাকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠা বিশেষভাবে পড়া উচিৎ। আশা করা যায়, এই বইগুলো পড়লে সে তার করনীয় বা দিক নির্দেশনা খুঁজে পাবে। বইগুলোর নামের তালিকা নিচে দেয়া হল।

(১) হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি (৫৪৮ পৃষ্ঠা)। লেখক- গোলাম মুরশিদ, অবসর প্রকাশনা।

(২) বাংলাদেশের ইতিহাস ৩ খন্ড (মোট ১৭৮৪ পৃষ্ঠা)।

(ক) রাজনৈতিক ইতিহাস (১ম খন্ড)
(খ) অর্থনৈতিক ইতিহাস (২য় খন্ড)
(গ) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস (৩য় খন্ড)

সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত।

(৩) বাংলাপিডিয়া, ১৪ খন্ড (মোট ৬৭৬৮ পৃষ্ঠা)।

সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত।

(৪) বাংলাদেশের সংবিধান (প্রায় ১০০ পৃষ্ঠা)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাব এই সিলেবাস তৈরি করেছে। এই ১০ হাজার পৃষ্ঠা পড়লে আপনি হয়তো কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞানী হতে পারবেন না কিন্তু এই সিলেবাস শেষ করলে মোটামুটি সব বিষয় সম্পর্কে আপনার একটা সাধারন ধারনা তৈরি হবে। ফলে, এই পঠন আপনাকে আপনার পছন্দের একাডেমিক জায়গা খুঁজে পেতে এবং আপনার ভবিষ্যত করনীয় সম্পর্কে একটা সলিড গাইডলাইন তৈরি করতে সাহায্য করবে।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নবীন ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই তালিকার সাথে ফরজে আইন হিসেবে আমি আরো দুইটি  বই পড়ার পরামর্শ দিবো। কারো এই দশ হাজার পৃষ্ঠা পড়ার ধৈর্য না থাকলেও এই বই দুটি যেন অবশ্যই পড়ে। আমার বিশ্বাস বই দুটি পড়লে পাঠকের চিন্তার জগতে নতুন এক আলোড়ন সৃষ্টি হবে।

প্রথম বইটির নামঃ

(৫) সোফির জগৎ ( ৪৮৪ পৃষ্ঠা)

লেখক: ইয়স্তেইন গার্ডার
অনুবাদ: জি এইচ হাবীব
সংহতি প্রকাশন
কনকর্ড এম্পোরিয়াম, কাঁটাবন, ঢাকা।

তেপ্পান্ন ভাষায় অনূদিত এবং তিন কোটির অধিক কপি বিক্রিত ওয়ার্ল্ড বেস্ট সেলার এই উপন্যাসটি মূলত ৩০০০ হাজার বছরের চিন্তার ইতিহাস। জীবন-জগত নিয়ে মানুষের চিরন্তন মৌলিক সব প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টেটল থেকে শুরু করে হালের স্টিফেন হকিং পর্যন্ত সব মহা-মনিষীদের ভাবনা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বোঝার উপযোগী করে অত্যন্ত সহজ ভাষায় থ্রিলার উপন্যাসের স্টাইলে এই বইটি লেখা হয়েছে।

দ্বিতীয় বইটির নামঃ

(৬) স্যাপিয়েন্স: আ ব্রিফ হিস্টোরি অব হিউমানকাইন্ড (প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠা)
লেখকঃ ইউভাল নোয়াহ হারারি

জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কর্তৃক লিখিত সানডে টাইমস বেস্ট সেলার এই বইটি এক কথায় অসাধারন। হোমো স্যাপিয়েন্সের পূর্ণাঙ্গ  ইতিহাস লিখতে তিনি বিবর্তনীয় জীববিদ্যার সাহায্য নেয়ায় বইটি বিদগ্ধ মহলে বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।

এখানে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠা রয়েছে। প্রতিদিন ৫০ পৃষ্ঠা করে পড়লে প্রায় ৬ মাসের মত লাগবে। তাই আর দেরী কেন? আজকেই শুরু হয়ে যাক নতুন এই পথচলা...

#HappyReading

বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন পরিচিতি ও উত্তর লেখার কৌশল!!!

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নের প্যাটার্ন বা ধরন কেমন হয়? আর তার উত্তরই বা কীভাবে লিখতে হয়?

সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রায় প্রতিটি ছেলে-মেয়ের কাছেই এগুলো মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। স্কুল-কলেজের ছকবাঁধা পড়াশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পড়াশুনার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও উত্তর লেখার পদ্ধতিও স্কুল-কলেজ থেকে কিছুটা আলাদা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার প্রশ্নের প্যাটার্ন নানা ধরনের হতে পারে। কোর্স টিচার কোন প্যাটার্নে প্রশ্ন করবে এটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের উপর নির্ভর করে। তবে পরীক্ষার প্রশ্নের প্রচলিত কিছু সাধারন প্যাটার্ন আছে। বেশিরভাগক্ষেত্রে সেইসব সাধারন প্যাটার্নেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সমাজবিজ্ঞানের প্রশ্নের সাধারন প্যাটার্নসমূহ দেখতে পোস্টের নিচের দেয়া ওয়েবলিংক ও ইউটিউব টিউটেরিয়াল দেখুন।

এছাড়া, সেমিনারের নাসির ভাই অথবা ইমিডিয়েট ব্যাচের কোন সিনিয়র ভাইয়া/আপুদের কাছ থেকে তাদের বিভাগীয় পরীক্ষার বিগত বছরের কোয়েশ্চেন সংগ্রহ করে দেখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সাধারনত বিগত বছরের কোয়েশ্চেন রিপিট হয় খুবই কম।

এর পরে আসি, ভার্সিটিতে পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লিখতে হয়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পড়াশুনার মত এই প্রশ্নের উত্তরও উন্মুক্ত। অর্থাৎ এর একক কোন ইউনিভার্সাল ছকবাঁধা ফরমেট নেই।

এ প্রসংগে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। একবার আমেরিকার এক বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় একটা রচনামূলক প্রশ্ন এসেছিল এরকম.. What is courage? Cite with examples. অর্থাৎ সাহস কী? উদাহরণ সহ উত্তর দাও।

তো এই প্রশ্নের উত্তরে যে স্টুডেন্ট সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল সে কতটুকু আর কী লিখেছিল কল্পনা করতে পারবেন?

সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত সেই স্টুডেন্টটি পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখে অর্থাৎ সম্পূর্ণ খাতাটি ফাঁকা রেখে একদম শেষের পৃষ্ঠায় যেয়ে শুধু This is the example of courage. লিখে খাতা জমা দিয়ে দেয় এবং ক্লাসের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়।

এ থেকে যা বোঝা যায় তা হলো, ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার খাতায় ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়েও আপনি আপনার নিজস্ব স্টাইল বা সৃজনশীলতা ব্যবহার করে উত্তর করতে পারেন।

পরীক্ষার খাতায় উত্তরপত্র লেখার একক কোন ইউনিভার্সাল ফরমেট না থাকলেও জনপ্রিয় কিছু সাধারন ফরমেটতো আছেই। আপনি চাইলে সেগুলোও অনুসরণ করতে পারেন।

এসব ফরমেট নিয়ে আমার কিছু লেখার দরকার নেই। কারন সমাজবিজ্ঞানের প্রশ্নের ধরন এবং উত্তরপত্র লেখার কৌশলের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য দুই পর্বের চমৎকার একটা ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল ও আমেরিকার RICE University এর একটা আর্টিকেলই যথেষ্ট। পোস্টের শেষে লিংক দেয়া আছে।

রাইস ইউনিভার্সিটি ও ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দুটি মনোযোগ সহকারে কয়েকবার পড়লে/দেখলে পরীক্ষায় প্রশ্ন কীভাবে আসতে পারে এবং কীভাবে তার উত্তর লিখতে হয় তা নিয়ে অন্তত আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। 

ভিডিও টিউটোরিয়ালটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলি, এটাতে সমাজবিজ্ঞানে মোটামুটি যে ধরনের প্রশ্ন হয় তার প্রায় সবগুলো প্যাটার্ন সম্পর্কেই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে চিত্র, চার্ট, উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে এর সাথে আমি কয়েকটা কথা যোগ করতে চাই। সেগুলো হল:-

১) ভূমিকা আর উপসংহার আপনার নিজের ভাষায়, নিজের মত করে লিখতে পারেন। অবশ্য চাইলে কোটেশান/সাইটেশানও ব্যবহার করতে পারেন। পরীক্ষকের কাছে শুরুতেই আপনার সম্পর্কে একটা পজিটিভ ইম্প্রেশান তৈরিতে চমৎকার একটা ভূমিকা ভাল কাজে দিতে পারে।

২) আনুষঙ্গিক রেফারেন্স বই, স্যারের ক্লাস লেকচার ইত্যাদি থেকে লেখার পাশাপাশি উত্তরের একটা অংশে আপনার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ/যুক্তি/অভিমত তুলে ধরতে পারেন।

৩) বাংলাদেশ সমাজ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একাধিক উদাহরণ দিতে পারলে ভাল নম্বর পেতে সহায়ক হবে।

৪) উত্তরপত্তে সাইটেশান, কোটেশান, চার্ট, ডায়াগ্রাম, পরিসংখ্যানিক তথ্য-উপাত্ত চাইলে ব্যবহার করতে পারেন অথবা এসবের ব্যবহার ব্যতীত আপনি আপনার নিজের মত করেও লিখতে পারেন। কেননা সমাজবিজ্ঞান বিভাগে এসব কোটেশান, চার্ট, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করেও যেমন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে, তেমনি এর কোন কিছু ব্যবহার না করে শুধুমাত্র নিজের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে লিখেও সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার নজির আছে। তাই, আপনার উত্তরপত্র সৃজনশীল হলে এবং তাতে শক্তিশালী ও ক্রিটিকাল আর্গুমেন্টসের উপস্থিতি থাকলে ভাল নম্বর না পাওয়ার কোন কারন নাই।

সমাজবিজ্ঞানের উত্তরপত্র লেখার ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল লিংক:

১ম পর্ব: https://youtu.be/v7Z4p9PwFNw

২য় পর্ব: https://youtu.be/DU_fYs0AkvU

উত্তরপত্র লেখার কৌশলের উপর RICE University এর লিংক:

sociology.rice.edu/content.aspx?id=106

দ্রষ্টব্য: এই লেখায় আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন থাকতে পারে। তাই এটাকে একমাত্র সঠিক পদ্ধতি ভাবা মোটেই ঠিক হবে না। বরং এর বাইরেও উত্তরপত্র লেখার আরো অনেক টেকনিক বা পদ্ধতি থাকতে পারে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের বিভাগে সবসময় স্টুডেন্ট এডভাইজার হিসেবে তিনজন স্যার/ম্যাডাম নিয়োজিত থাকেন। তাদের সাথে পড়াশুনা সহ যেকোন বিষয়ে এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও কথা বলা যায়। স্যার/ম্যাডামরা আন্তরিকতার সাথে সেগুলো শোনেন এবং যথাযথ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই পড়াশুনা সংক্রান্ত যেকোন পরামর্শের জন্য সরাসরি ম্যাডাম/স্যারদের সাথে যোগাযোগ করাই সবচেয়ে ভাল ও নির্ভরযোগ্য।

NB: This post is written for the fresher students of Sociology, University of Dhaka.

Saturday, January 28, 2017

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নবীনরা যেসব প্রাথমিক বই পড়তে পারেন!

সম্প্রতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একঝাঁক নবীনের আগমন ঘটেছে। সমাজবিজ্ঞানকে ভালভাবে জানতে ও বুঝতে চাইলে বই পড়ার বিকল্প নাই। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নবীন ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাথমিক একটা বইয়ের লিস্ট দেয়া হল। আশা করা যায়, বইগুলো পড়লে দীর্ঘমেয়াদে নানাভাবে উপকৃত হওয়া যাবে।

১) সোশিওলজি
লেখক: এন্থনি গিডেন্স

সমাজবিজ্ঞানের ইন্ট্রোডাক্টোরি পর্যায়ের বাইবেল এটি। প্রথম বর্ষের সব স্টুডেন্টের জন্য একদম সহজ ইংরেজি টেক্সটের এই বইটি সম্পূর্ণ পড়া বাধ্যতামূলক। ইংরেজী বুঝতে সমস্যা হলে পাশে এর বাংলা অনুবাদ ভার্সন রেখে হলেও পড়তে হবে।

২) সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ
লেখক: অধ্যাপক নাজমুল করিম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক নাজমুল করিম স্যারের লেখা বই। ইন্ট্রোডাক্টোরি পর্যায়ের অন্যতম সেরা বই। জুনিয়রদের অবশ্যই পড়া উচিত।

৩) সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
লেখক: অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি।

বাংলা ভাষায় সমাজবিজ্ঞানের ইন্ট্রোডাক্টোরি পর্যায়ের প্রাথমিক লেভেলের আরও একটি বই। এটিও রিডিং পড়লে উপকৃত হওয়া যাবে।

৪) সমাজবিজ্ঞান শব্দকোষ
লেখক: প্রফেসর আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, ঢাবি।

সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্টসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে বুঝতে বইটি সাহায্য করবে।

৫) পরিবর্তনশীল সমাজ: ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ
লেখক: অধ্যাপক নাজমুল করিম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি।

উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের সমাজ বুঝতে চাইলে বইটি পড়ার কোন বিকল্প নাই।

৬) সোফির জগৎ
মূল লেখক: ইয়স্তাইন গার্ডার
অনুবাদ: জি এইচ হাবীব

সমাজবিজ্ঞান তথা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জীবনের শুরুতেই প্রতিটি স্টুডেন্টের এই বইটি পড়া উচিত। অত্যন্ত সহজ ভাষায় লিখিত সুপাঠ্য এই বইটি মূলত মানুষের তিন হাজার বছরের চিন্তা তথা দর্শনের ইতিহাস নির্ভর থ্রিলার উপন্যাস। বইটিতে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টেটল থেকে শুরু করে কান্ট, হেগেল, মার্ক্স, ফ্রয়েড, ডারউইন.... এবং হালের ক্রেজ স্টিফেন হকিংস পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য দার্শিনিকদের চিন্তার মেইন থিম গল্পের আকারে বিবৃত হয়েছে। দর্শন হচ্ছে সকল জ্ঞানের মা বা রুট। তাই দর্শন বা দর্শনের ইতিহাস না জানলে শুধু সমাজবিজ্ঞান কেন কলা/সামাজিক বিজ্ঞানের যেকোন শাখাই ভালভাবে উপলব্ধি অপূর্ণাঙ্গ থাকবে।

৭) হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি
লেখক: গোলাম মুরশিদ

বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির বয়স প্রায় এক হাজার বছর। এই এক হাজার বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বইটিতে। আর এই ইতিহাস শুধুমাত্র রাজা-বাদশাদের কাহিনী বা রাজনৈতিক ইতিহাস না, বইটিতে বাঙালি জাতীর উৎপত্তি, বিকাশ, ভাষা, কৃষ্টিকালচার, পোষাক, খ্যাদ্যভ্যাস, শিল্পকলা, সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত ইত্যাদি এক কথায় বাঙালি জাতীর সামাজিক ইতিহাস চমৎকার ভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই বইটি এজন্য পড়া জরুরি যে বাঙালি সংস্কৃতি বা বাঙালির ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা না থাকলে সমাজবিজ্ঞানের সাথে বাংলাদেশের সমাজকে রিলেট করা যাবেনা।

৮) লাল নীল দীপাবলি (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস)
লেখক: হূমায়ুন আজাদ, বাংলা বিভাগ, ঢাবি।

সাহিত্য মানে হচ্ছে সমাজের মানুষের তথা সামাজিক ইতিহাস। একমাত্র সাহিত্যেই সমাজের উঁচুনিচু সব শ্রেনীর মানুষের কথা অসাধারনভাবে ফুটে ওঠে। মাত্র ১০০ পৃষ্ঠার এই বইটি সমাজবিজ্ঞান বুঝতে ও বিসিএসে ভাল করতেও অনেক কাজে লাগবে।

৯) ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস
লেখক: সাবিদিন ইব্রাহিম, ঢাবি।

ইংরেজী সাহিত্যের ইতিহাস মানে বিশ্বের বড় একটা অংশের মানুষের চিন্তাভাবনার ইতিহাস। বাংলা ভাষায় রচিত সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও সহজ ভাষায় লিখিত মাত্র ১০০ পৃষ্টার এই বইটি পড়লে দোজাহানের (জ্ঞান ও বিসিএস) অশেষ কল্যান হাসিল হবে। ;)

১০) পৃথিবীর ইতিহাস
লেখক: জওহরলাল নেহেরু, ইন্ডিয়া।

ইন্ডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তার দশ বছর বয়সী কন্যা ইন্দ্রিরা গান্ধীকে চিঠির মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাস শিখিয়েছেন। মাত্র ১০০ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়লে আপনি একেবারে পৃথিবীর শুরু অর্থাৎ প্রানের উৎপত্তি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবকিছু সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা পাবেন।

১১) ভোলগা থেকে গংঙ্গা
লেখক: রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ইন্ডিয়া।

গল্পের আবরণে লেখক বইটিতে প্রাচীন আমল থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আর্যদের সমাজ বিকাশ এবং পথপরিক্রমার ইতিহাস লিখেছেন। বইটিতে মোট ২০টি ছোট গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্প সমাজ বিকাশের একেকটি ধাপ। বইটি শুরু হয়েছে ৬০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে ভোলগা নদীর তীরে যে মানবগোষ্ঠী পরিবার স্থাপন করেছিলো, তাদেরই আবাস ও জীবন নিয়ে এবং শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের দেশ বিভাগের কাহিনীর মধ্য দিয়ে।

বিদ্র: সবগুলো বইই rokomari.com এ অর্ডার করলে হল/বাসায় পৌছে দেবে। বই হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া মিঞা শোভনের বই বিক্রি কার্যক্রম "দেউলিয়া"তে অর্ডার করলেও সংশ্লিষ্ট বই ক্যাম্পাসে ডেলিভারি দিয়ে যাবে।  এছাড়া অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করলে কিছু বইয়ের সফটকপিও অনলাইনে ফ্রি পাওয়া যেতে পারে।

#সমাজবিজ্ঞান
#পড়াশুনা
#বুকলিস্ট