Friday, November 20, 2015

হে ফেস্টিভ্যাল থেকে ঢাকা লিট ফেস্ট!

বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব হে-অন-ওয়ে ফেস্টিভ্যালের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১১ সালে প্রথমবারের মত ঢাকা ব্রিটিশ কাউন্সিলে হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত হয়। মূলত বিশ্বজুড়ে হে উৎসবকে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থেকেই হে কর্তৃপক্ষ ঢাকায় হে সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে।

পরবর্তীতে ২০১২ সাল থেকে বাংলা একাডেমিতে বেশ বড় পরিসরেই এই উৎসবটি নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথম দিকে এ উৎসব আয়োজনে ডেইলি স্টার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রধান ভূমিকা পালন করলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রনালয়, বাংলা একাডেমি ও দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসমূহ এর পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসে।

ঢাকায় হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের উদ্দেশ্য হিসেবে আয়োজকরা বিশ্বের দরবারে হাজার বছরের বাংলাদেশী সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার কথা বলেন। বিদেশী কবি-সাহিত্যিক-লেখক, মিডিয়া ও প্রকাশকদের সাথে এ দেশের কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের মধ্যে যেন একটি সেতুবন্ধন গড়ে ওঠে তার কথা বলেন।

হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের পঞ্চম বছরে এসে আয়োজকরা তার নাম পরিবর্তন করে ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল বা ঢাকা লিট ফেস্ট করেন। এর কারন হিসেবে আয়োজকরা বিদেশী প্রতিষ্ঠান
হে-অন-ওয়ের নাম ব্রান্ডিংয়ের পরিবর্তে ঢাকা তথা বাংলাদেশ নামের ব্রান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যের কথা বলেন।

হে উৎসব বা ঢাকা লিট ফেস্টের অন্যতম একটা থিম 'বাংলাদেশের লেখা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া’ যার অংশ হিসেবে প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সাময়িকী ওয়াসাফিরি প্রথমবারের মতো এ বছর বাংলাদেশের সাহিত্যকে বিষয় করে পুরো একটি বিশেষ সংখ্যা বের করছে। এটাকে আয়োজকরা এই উৎসবের একটি সফলতা হিসেবে দেখছেন।

সমালোচকদের কেউ একে 'হায় হায় উৎসব' আবার কেউ বড়লোকদের সাহিত্য উৎসব বলে অভিহিত করেন। কেউ আবার ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কন্যা ইংরেজি ঔপন্যাসিক তাহমিমা আনামকে দেশে ও বিদেশে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়ার উদ্দেশ্যের কথাও বলেন।

এ কথা সত্য যে উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কন্যা তাহমিমা আনাম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান যাত্রিকের কর্ণধার সাদাফ সায, ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ ইংরেজী ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। হে উৎসব বা ঢাকা লিট ফেস্ট আয়োজনে তাই তাদের ব্যাক্তিগত উৎসাহ বা স্বার্থ থাকলেও আমি সেটাকে খুব বেশি নেগেটিভলি দেখার পক্ষপাতী না।

হে উৎসব বা ঢাকা লিট ফেস্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বসাহিত্যকে বাংলাদেশের কাছে নিয়ে আসা এবং বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা। বিশ্বায়নের যুগে তাই এই ধরনের ফেস্টিভ্যালের গুরুত্বকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই।

হে ফেস্ট বা ঢাকা লিট ফেস্টে যে শুধু সাহিত্য নিয়েই আলোচনা হয়, তা কিন্তু নয়। ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, নারীবাদ, জেন্ডার ইস্যু প্রভৃতি নিয়েও নানা সেমিনার, আলোচনা ও মতবিনিময় হয়ে থাকে। এই যেমন আজ লিট ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনে আমার একাডেমিক ইন্টারেস্টের জায়গা মাইনোরিটি ও জেন্ডার ইস্যু রিলেটেড সেক্স ওয়ার্কার ও উইমেন এম্পাওরমেন্টের উপর দুটি ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশনে অংশগ্রহন করলাম।

হে ফেস্ট তথা ঢাকা লিট ফেস্টে টানা তিন বছরের অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতা থেকে আমার উপলব্ধি হচ্ছে বিশ্বায়নের যুগে এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্কলার, লেখক, সাহিত্যিক ও নানা ফিল্ডের প্রমিনেন্ট এক্টিভিস্টদের চিন্তার সাথে পরিচয় ও মিথস্ক্রিয়ার এই সুযোগ দেশের তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের জন্য ঢাকা লিট ফেস্ট চমৎকার এক উপলক্ষ বলে মনে করি।

No comments:

Post a Comment