Tuesday, January 19, 2016

পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়ী অধিবাসীরা আদিবাসী নাকি উপজাতি?

জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত আলোচনার পরেও 'আদিবাসি' সম্পর্কে একক কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয় নাই। তবে 'আইএলও' 'উপজাতি' ও 'আদিবাসি'র একটা সংজ্ঞা দেয়। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী উপজাতি তারাই:

১। যারা নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রথাগত জীবন যাপন করে।

২। যাদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা।

৩। যাদের নিজস্ব সামাজিক প্রথা, প্রথিষ্ঠান ও আইন আছে।

আর আদিবাসীদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আরো একটি বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়, তা হল:

৪। "কোন এলাকা অন্য কারো দ্বারা দখলকৃত হওয়ার আগে বা ঐ এলাকায় অন্য কারো আগমনের আগ পর্যন্ত (প্রাক ঔপনিবেশিক) যাদের ঐ এলাকায় বসবাসের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আছে।"

পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়ী অধিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রথম তিনটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিতর্ক নেই। এখন চতুর্থ বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

পার্বত্য চট্রগ্রামে কোন জাতিগোষ্ঠী বসবাসের জন্য আগে এসেছিল সে ঐতিহাসিক বিতর্কে আমি যাবনা। আমি শুধু ব্রিটিশ আমল থেকে পরিচালিত কিছু আদমশুমারি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করব।

১৮৭২ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার মধ্যে পাহাড়ী বা আদিবাসি ছিল ৯৮% ও বাঙালি ছিল মাত্র ২%।

১৯০১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে আদিবাসি জনসংখ্যা ছিল ৯৩% ও বাঙালি ছিল মাত্র ৭%।

১৯৫১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে আদিবাসি জনসংখ্যা ছিল ৯১% ও বাঙালি ছিল মাত্র ৯%।

এর পর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাঙালি সেটেলমেন্ট প্রোগ্রামের কারনে পার্বত্য চট্রগ্রামে বাঙালিদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।

তাই ১৯৮১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, পার্বত্য চট্রগ্রামে আদিবাসি জনসংখ্যার পরিমান দাড়ায় ৫৯% ও বাঙালি ৪১%।

এরপর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে আদিবাসি জনসংখ্যার পরিমান দাড়ায় ৪৮% ও বাঙালি ৫২%।

তো, কী বোঝা গেল?

আসল কথা হচ্ছে, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের নেয়া সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম ও পরবর্তিতে সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নীতির কারনে এভাবেই দিন দিন পাহাড়ীরা তাদের পাহাড়ে সংখ্যালঘুতে পরিনত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একসময় অণুবীক্ষণযন্ত্র যন্ত্র দিয়েও দু-চারটা পাহাড়ী খুঁজে পেতে বেগ হবে।

No comments:

Post a Comment