বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নের প্যাটার্ন বা ধরন কেমন হয়? আর তার উত্তরই বা কীভাবে লিখতে হয়?
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রায় প্রতিটি ছেলে-মেয়ের কাছেই এগুলো মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। স্কুল-কলেজের ছকবাঁধা পড়াশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পড়াশুনার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন ও উত্তর লেখার পদ্ধতিও স্কুল-কলেজ থেকে কিছুটা আলাদা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার প্রশ্নের প্যাটার্ন নানা ধরনের হতে পারে। কোর্স টিচার কোন প্যাটার্নে প্রশ্ন করবে এটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের উপর নির্ভর করে। তবে পরীক্ষার প্রশ্নের প্রচলিত কিছু সাধারন প্যাটার্ন আছে। বেশিরভাগক্ষেত্রে সেইসব সাধারন প্যাটার্নেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সমাজবিজ্ঞানের প্রশ্নের সাধারন প্যাটার্নসমূহ দেখতে পোস্টের নিচের দেয়া ওয়েবলিংক ও ইউটিউব টিউটেরিয়াল দেখুন।
এছাড়া, সেমিনারের নাসির ভাই অথবা ইমিডিয়েট ব্যাচের কোন সিনিয়র ভাইয়া/আপুদের কাছ থেকে তাদের বিভাগীয় পরীক্ষার বিগত বছরের কোয়েশ্চেন সংগ্রহ করে দেখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সাধারনত বিগত বছরের কোয়েশ্চেন রিপিট হয় খুবই কম।
এর পরে আসি, ভার্সিটিতে পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর কীভাবে লিখতে হয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত পড়াশুনার মত এই প্রশ্নের উত্তরও উন্মুক্ত। অর্থাৎ এর একক কোন ইউনিভার্সাল ছকবাঁধা ফরমেট নেই।
এ প্রসংগে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। একবার আমেরিকার এক বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির পরীক্ষায় একটা রচনামূলক প্রশ্ন এসেছিল এরকম.. What is courage? Cite with examples. অর্থাৎ সাহস কী? উদাহরণ সহ উত্তর দাও।
তো এই প্রশ্নের উত্তরে যে স্টুডেন্ট সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল সে কতটুকু আর কী লিখেছিল কল্পনা করতে পারবেন?
সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত সেই স্টুডেন্টটি পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখে অর্থাৎ সম্পূর্ণ খাতাটি ফাঁকা রেখে একদম শেষের পৃষ্ঠায় যেয়ে শুধু This is the example of courage. লিখে খাতা জমা দিয়ে দেয় এবং ক্লাসের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়।
এ থেকে যা বোঝা যায় তা হলো, ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার খাতায় ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়েও আপনি আপনার নিজস্ব স্টাইল বা সৃজনশীলতা ব্যবহার করে উত্তর করতে পারেন।
পরীক্ষার খাতায় উত্তরপত্র লেখার একক কোন ইউনিভার্সাল ফরমেট না থাকলেও জনপ্রিয় কিছু সাধারন ফরমেটতো আছেই। আপনি চাইলে সেগুলোও অনুসরণ করতে পারেন।
এসব ফরমেট নিয়ে আমার কিছু লেখার দরকার নেই। কারন সমাজবিজ্ঞানের প্রশ্নের ধরন এবং উত্তরপত্র লেখার কৌশলের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য দুই পর্বের চমৎকার একটা ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল ও আমেরিকার RICE University এর একটা আর্টিকেলই যথেষ্ট। পোস্টের শেষে লিংক দেয়া আছে।
রাইস ইউনিভার্সিটি ও ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দুটি মনোযোগ সহকারে কয়েকবার পড়লে/দেখলে পরীক্ষায় প্রশ্ন কীভাবে আসতে পারে এবং কীভাবে তার উত্তর লিখতে হয় তা নিয়ে অন্তত আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
ভিডিও টিউটোরিয়ালটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলি, এটাতে সমাজবিজ্ঞানে মোটামুটি যে ধরনের প্রশ্ন হয় তার প্রায় সবগুলো প্যাটার্ন সম্পর্কেই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে চিত্র, চার্ট, উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে এর সাথে আমি কয়েকটা কথা যোগ করতে চাই। সেগুলো হল:-
১) ভূমিকা আর উপসংহার আপনার নিজের ভাষায়, নিজের মত করে লিখতে পারেন। অবশ্য চাইলে কোটেশান/সাইটেশানও ব্যবহার করতে পারেন। পরীক্ষকের কাছে শুরুতেই আপনার সম্পর্কে একটা পজিটিভ ইম্প্রেশান তৈরিতে চমৎকার একটা ভূমিকা ভাল কাজে দিতে পারে।
২) আনুষঙ্গিক রেফারেন্স বই, স্যারের ক্লাস লেকচার ইত্যাদি থেকে লেখার পাশাপাশি উত্তরের একটা অংশে আপনার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ/যুক্তি/অভিমত তুলে ধরতে পারেন।
৩) বাংলাদেশ সমাজ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে একাধিক উদাহরণ দিতে পারলে ভাল নম্বর পেতে সহায়ক হবে।
৪) উত্তরপত্তে সাইটেশান, কোটেশান, চার্ট, ডায়াগ্রাম, পরিসংখ্যানিক তথ্য-উপাত্ত চাইলে ব্যবহার করতে পারেন অথবা এসবের ব্যবহার ব্যতীত আপনি আপনার নিজের মত করেও লিখতে পারেন। কেননা সমাজবিজ্ঞান বিভাগে এসব কোটেশান, চার্ট, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করেও যেমন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে, তেমনি এর কোন কিছু ব্যবহার না করে শুধুমাত্র নিজের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে লিখেও সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার নজির আছে। তাই, আপনার উত্তরপত্র সৃজনশীল হলে এবং তাতে শক্তিশালী ও ক্রিটিকাল আর্গুমেন্টসের উপস্থিতি থাকলে ভাল নম্বর না পাওয়ার কোন কারন নাই।
সমাজবিজ্ঞানের উত্তরপত্র লেখার ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল লিংক:
১ম পর্ব: https://youtu.be/v7Z4p9PwFNw
২য় পর্ব: https://youtu.be/DU_fYs0AkvU
উত্তরপত্র লেখার কৌশলের উপর RICE University এর লিংক:
sociology.rice.edu/content.aspx?id=106
দ্রষ্টব্য: এই লেখায় আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন থাকতে পারে। তাই এটাকে একমাত্র সঠিক পদ্ধতি ভাবা মোটেই ঠিক হবে না। বরং এর বাইরেও উত্তরপত্র লেখার আরো অনেক টেকনিক বা পদ্ধতি থাকতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের বিভাগে সবসময় স্টুডেন্ট এডভাইজার হিসেবে তিনজন স্যার/ম্যাডাম নিয়োজিত থাকেন। তাদের সাথে পড়াশুনা সহ যেকোন বিষয়ে এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও কথা বলা যায়। স্যার/ম্যাডামরা আন্তরিকতার সাথে সেগুলো শোনেন এবং যথাযথ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই পড়াশুনা সংক্রান্ত যেকোন পরামর্শের জন্য সরাসরি ম্যাডাম/স্যারদের সাথে যোগাযোগ করাই সবচেয়ে ভাল ও নির্ভরযোগ্য।
NB: This post is written for the fresher students of Sociology, University of Dhaka.